ঢাকা: রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে ২৫ জুন (বুধবার) থেকে পরিবেশ মেলা ও বৃক্ষমেলা শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে সচিবালয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, পরিবেশ মেলা চলবে ২৫ থেকে ২৭ জুন এবং বৃক্ষমেলা চলবে ২৫ জুন থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
তিনি জানান, ২৫ জুন বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস। অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অবদানের জন্য জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৪, বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ জাতীয় পুরস্কার ২০২৫ এবং বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার ২০২৪ প্রদান করা হবে। একইসঙ্গে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের মধ্যে লভ্যাংশের চেক বিতরণ করা হবে।
উপদেষ্টা জানান, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা ও বনসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবারও বিশ্ব পরিবেশ দিবস, পরিবেশ মেলা, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা আয়োজন করা হয়েছে। এ বছরের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়’ এবং বৃক্ষরোপণ অভিযানের প্রতিপাদ্য ‘পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’।
তিনি বলেন, এ উপলক্ষে জেলা-উপজেলা এবং ঢাকা মহানগরের ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন, বিতর্ক, স্লোগান প্রতিযোগিতা, সেমিনার এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম আয়োজন করা হবে। এছাড়া বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় বৃক্ষমেলা এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে চারা বিতরণ করা হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে মোবাইল এসএমএস প্রচারণা, ব্যানার স্থাপন ও জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি জানান, প্লাস্টিক দূষণ মানুষের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে ক্যান্সারসহ নানা দুরারোগ্য রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এ কারণে সরকার ১ জুন ২০২৫ থেকে স্ট্র, স্টারার ও কটন বাড নিষিদ্ধ করেছে এবং ১৭টি সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ‘এক্সটেন্ডেড প্রডিউসার রেস্পন্সিবিলিটি (ইপিআর)’ এর খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে, চট্টগ্রামের ৮টি ও দেশের ৪০টি উপজেলাকে ‘এক্সপোজড কোস্ট’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গত নভেম্বর ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত পরিচালিত ৪৩৪টি মোবাইল কোর্ট অভিযানে ৮১৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং ২ লাখ ৩৩ হাজার কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করা হয়েছে। বনভূমি রক্ষায় আগস্ট ২০২৪ থেকে ১ হাজার ৭১৭ একর বনভূমি দখলমুক্ত করে বন বিভাগের আওতায় আনা হয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্পের নামে দেওয়া বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে, মীরসরাইয়ের বেজাকে দেওয়া ৪ হাজার ১০৪ একর জমি পুনরুদ্ধারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ১৯৯৫-৯৬ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ৪ লাখ ২৬ হাজার ৮৪২ হেক্টর ব্লক বাগান, ৭২ হাজার ৫৮১ কিমি স্ট্রিপ বাগান সৃজন এবং ২০ কোটি ৬২ লাখ চারা রোপণ ও বিতরণ করা হয়েছে। সামাজিক বনায়নের ২ লাখ ৫০ হাজার উপকারভোগীর মধ্যে ৫০৫ কোটি টাকা লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়েছে। হাতি, শকুন, শাপলাপাতা মাছ, পরিযায়ী পাখি, হাঙর, ডলফিন, ঘড়িয়াল সংরক্ষণ কার্যক্রম চালু আছে। হালনাগাদ করা হয়েছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, বাতিল করা হয়েছে মৌলভীবাজারের লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক প্রকল্প এবং পূর্বাচল এলাকায় ঘোষণা করা হয়েছে জীববৈচিত্র্য অঞ্চল।
উপদেষ্টা জানান, বায়ু, শব্দ ও নদীদূষণ রোধে ১ হাজার ৬৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ২ হাজার ৪৯৯টি মামলায় ২৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং ৪৮১টি ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) বাস্তবায়নে নেওয়া হয়েছে নতুন কর্মপরিকল্পনা।
সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সরকার যেমন সচেষ্ট, তেমনি গণমাধ্যম ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণও অপরিহার্য। পরিবেশবান্ধব কর্মসূচিগুলো দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছাতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) ড. ফাহমিদা খানম, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. খায়রুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান এবং বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী।