ঢাকা: চাকরি ও বাসস্থানসহ ৮ দফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন এবং প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)-তে বসবাসরত পরিচ্ছন্নতা পেশায় নিয়োজিত হরিজন জনগোষ্ঠী।
বেসরকারি মানবাধিকার উন্নয়ন সংস্থা পরিত্রাণ-এর উদ্যোগে এবং এভিনা অ্যামেরিকাস ও ডেমোক্রেসি অ্যাট ওয়ার্ক ফান্ড-এর সহায়তায় মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে গুলশান ২-এ উত্তর সিটি কর্পোরেশন চত্বরে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত হরিজন জনগোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের বঞ্চনা, অবহেলা ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং তাদের জন্য একটি সমঅধিকারভিত্তিক, মর্যাদাসম্পন্ন ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও দায়বদ্ধতার আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ‘বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ’-এর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব প্রদীপ দাস হেলা বলেন, “দীর্ঘ ৫০ বছরেও পিছিয়ে পড়া হরিজন সম্প্রদায়ের নাগরিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখনও হরিজনদের পেশার কারণে লাঞ্ছিত ও বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এমনকী সরকার সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঝাড়ুদার/ ক্লিনার/ সুইপার (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) পদে ৮০% কোটা বাস্তবায়ন রাখার কথা থাকলেও তা উত্তর সিটি করপোরেশনে একেবারেই মানা হয়নি। পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত থাকলেও এতো বছরেও হরিজন গণগোষ্ঠীর কাউকেই উত্তর সিটি করপোরেশনে চাকরি দেয়া হয়নি। যা খুবই অন্যায় ও চরম বৈষম্যমূলক। তিনি এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে সিটি করপোরেশনের পরবর্তী নিয়োগে পরিচ্ছন্নতা পেশায় হরিজন সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করার আহ্বার জানান।
মানবন্ধনে অংশ নিয়ে উত্তর মহানগরের ‘হরিজন ঐক্য পরিষদ’-এর সহ সভাপতি লেবু বাসফো জানান তারা দীর্ষ সময় থেকে তাদের অধিকার বঞ্চিত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে হরিজন জনগোষ্ঠী যুক্ত থাকলেও উত্তর সিটি করপোরেশনে একজনও হরিজন জনগোষ্ঠীর নেই। এ বৈষম্য দুরীকরণে সরকারের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে নিজেদের দীর্ঘদিনের জমে থাকা কষ্টের কথা তুলে ধরে হরিজন জনগোষ্ঠীর সীমা রানী জানান, জীবনে বেঁচে থাকার যুদ্ধটা অনেক কষ্ট করে পার করতে হচ্ছে। কারণ তারা তাদের জন্য নির্ধারিত চাকরি পাচ্ছেন না। পাচ্ছেন না থাকার মতো কোন জায়গা।
আরেকজন পুষ্প হরিজন জানান, তাদেরকে নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে সমাজে চলতে হয়। কারণ পরিচয় জানলে তাদের ঘর বা বাসা ভাড়াটাও কেউ দিতে চায় না। না খেয়ে দেয়ে তাদের জীবন চলছে। তাদের দেখার যেন কেউ নেই।
হরিজন জনগোষ্ঠীর ৮ দফা দাবিগুলো হচ্ছে-
১. উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীনস্থ এলাকায় বসবাসকারী হরিজন জনগোষ্ঠীর স্থায়ী আবাসন ও পূর্ণ নাগরিক স্বীকৃতি প্রদান;
২. সরকারি আবাসনে শতভাগ হরিজন পরিবারের বসবাস নিশ্চিত করা;
৩. পরিচ্ছন্নতা পেশায় নিয়োগে স্থানীয় হরিজনদের অগ্রাধিকার ও কোটানীতির যথাযথ বাস্তবায়ন;
৪. চুক্তিভিত্তিক ও আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ার অবসান, পেশাভিত্তিক সম্মানজনক স্থায়ী নিয়োগ;
৫. উন্নয়ন প্রকল্প ও স্থানীয় পরিষদে হরিজনদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা;
৬. সম্মানজনক নাগরিক সেবা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা;
৭. হরিজন নারীদের জন্য পৃথকভাবে সামাজিক সুরক্ষা ও কর্মসংস্থান সুবিধা বাড়ানো এবং
৮. সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার ও নির্ধারিত বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি।

-ছবি : সারাবাংলা
মানববন্ধন শেষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের পক্ষে উপসচিব ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন মিয়া’র কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়।
এ সময় ডিএনসিসির উপসচিব ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন মিয়া হরিজন জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করে তাদের দাবি’র প্রতি একাত্বতা জানিয়ে তাদের যৌক্তিক ও ইতিবাচক দাবির বিষয়ে দ্রুত প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন- প্রদীপ দাস হেলা, মহাসচিব, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ, মিলন দাস, নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী, পরিত্রাণ, উজ্জ্বল কুমার দাস, প্রকল্প সমন্বয়কারী, পরিত্রাণ, সৈয়দা রেজিনা আক্তার রোজি, প্রজেক্ট অফিসার, পরিত্রাণ, অনিক দাস, ফিল্ড অফিসার, পরিত্রাণ, লাকী রনজিত বাঁশফোড়, গণমাধ্যমকর্মী, রুবেল বাঁশফোড়, সভাপতি, উত্তরা শাখা, হরিজন ঐক্য পরিষদএবং হরিজন সম্প্রদায়ের তরুণ প্রতিনিধি সঞ্জীব বাঁশফোড়, রনজিত বাঁশফোড়, লেবু বাঁশফোড়, ও পরিত্রাণ কর্মী মো. হাবিব প্রমুখ।