Tuesday 24 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হকার বাবার ৪০ বছরের লড়াই
ছেলেকে পৌঁছে দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৪ জুন ২০২৫ ২০:৪৯

মো. আব্বাস আলী। ছবি: সংগৃহীত

নীলফামারী: চোখে মায়াভরা প্রশান্তি, মুখে হালকা হাসি। হাতে শিশুদের বই, আর একটি ছোট ব্যাগে কিছু কলম, ব্রাশ আর সেলাইয়ের সুঁই। প্রথম দেখায় যেকোনো মানুষ ভেবে বসবে, তিনি কেবল একজন সাধারণ হকার। অথচ এই সাদামাটা চেহারার আড়ালেই লুকিয়ে আছে এক বাবার চার দশকের কঠিন সংগ্রাম আর নিঃশব্দ আত্মত্যাগের গল্প— তাও আবার সন্তানকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য।

এই মানুষটির নাম মো. আব্বাস আলী। বয়স ৬৫ বছর। বাড়ি নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার হাড়িনচড়া ইউনিয়নের শ্যাওডগাড়ি গ্রামে। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তিনি হাটে হাটে ঘুরে বিক্রি করছেন শিশুদের বই, কলম, ব্রাশ ও সেলাইয়ের সুঁই। তার সামান্য এই ব্যবসাই পরিবারের একমাত্র অবলম্বন।

বিজ্ঞাপন

আব্বাস আলী বলেন, ‘প্রতিদিন নয়, শুধু হাটের দিনগুলোতে বাজারে যাই। বই ২০ থেকে ৫০ টাকা, কলম পাঁচ টাকা, ব্রাশ ২০ টাকা, আর সুঁই বিক্রি করি পাঁচ টাকা করে। এই বিক্রির টাকায় সংসার চালাই, ছেলে-মেয়ের খরচ দেই।’

কঠোর পরিশ্রম ও আত্মসংবরণের মধ্যেও তিনি কখনো পেশা বদলাননি, ভেঙে পড়েননি। বরং একাগ্রতায় লড়ে গেছেন নিজের বিশ্বাস আর সন্তানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে। তার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন— ছেলে এখন পড়ছে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তিনি বলেন, ‘৪০ বছর ধরে এই কাজ করছি। একসময় ১৬ বছর বালিশ ছাড়া ঘুমিয়েছি। কত কষ্ট করছি— তা বলে বোঝানো যাবে না। এখনো ভোরে উঠে ঝুলিতে পণ্য ভরে হাটে হাটে ঘুরি। রোদ-বৃষ্টি কিছুই আমাকে থামাতে পারেনি। এই আয় থেকেই ছেলেকে মাসে ১২০০ টাকা পাঠাই।’

আব্বাস আলীর দুই সন্তান— এক ছেলে, এক মেয়ে। মেয়েটি বাড়িতে থাকলেও ছেলেকে নিয়ে তার স্বপ্ন অনেক বড়। তিনি বলেন, ‘নিজের জন্য কিছু চাই না। শুধু চাই, ছেলে বড় হয়ে ভালো মানুষ হোক।’

সমাজের অনেকেই যেখানে বয়সকালে পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েন বা সহজ পথে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করেন, সেখানে আব্বাস আলী মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন নিজের শ্রমের ওপর ভর করে।

রামগঞ্জ হাটের একজন ক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আব্বাস চাচা একজন ব্যতিক্রম মানুষ। আমি প্রায়ই ওনার কাছ থেকে কিছু না কিছু কিনি, কারণ উনার মতো সৎ ও পরিশ্রমী মানুষ আজকাল খুব কম দেখা যায়। এই বয়সেও তিনি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছেন, কোনোদিন কারও কাছে হাত পাতেননি।’

আব্বাস আলীর সংগ্রামী জীবনের গল্প আমাদের সমাজের জন্য নিঃসন্দেহে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি প্রমাণ করেছেন— সীমিত উপার্জন, শত কষ্ট আর বাধার মধ্যেও যদি ইচ্ছা আর লক্ষ্য থাকে অটুট, তবে যেকোনো বড় স্বপ্নও বাস্তবে রূপ নেয়।

সারাবাংলা/পিটিএম

ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হকার বাবা