Tuesday 24 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু প্রকোপও বাড়ছে, তবে পরিস্থিতি ‘উদ্বেগজনক’ নয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৪ জুন ২০২৫ ২৩:৫৮

ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। চলতি জুন মাসের গত ২৩ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১২২ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক নয় বলছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে, এ কারণে জুলাই থেকে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা, যা অব্যাহত থাকতে পারে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস পর্যন্ত।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ১ জন চট্টগ্রাম সরকারী জেনারেল হাসপাতাল, ৭ জন বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ১ জন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে জানুয়ারি থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত মোট ৩৯১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এতে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। গত মে মাসে ১১৬ জন এবং জুনের ২৩ দিনে ১২২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৮ জন, মার্চে ২২ জন, এপ্রিলে ৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এসময়ের মধ্যে জানুয়ারিতে একজন ও এপ্রিলে একজনসহ মোট ২ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়।

তাদের তথ্যমতে, আক্রান্ত ৩৯১ জনের মধ্যে ১৬৬ জন নগরীর এবং ২২৫ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। চলতি জুন মাসের ২৩ দিনে আক্রান্ত ১২২ জনের মধ্যে ৩৯ জন নগরীতে এবং ৮৩ জন বিভিন্ন উপজেলায় বসবাস করেন।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। এবারও ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি অনুকূলে আছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, চিকিৎসার পর সুস্থ হচ্ছেন। আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলো এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনেকে বেসরকারি হাসপাতালেও ভর্তি হচ্ছেন।’

সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরে এ পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৬২ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০৩ জন, সীতাকুণ্ড উপজেলায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ৪৭ জন, চট্টগ্রাম সরকারী জেনারেল হাসপাতালে ৩২ জন, চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ২ জন, বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪৮ জন এবং বেসরকারি বিভিন্ন ক্লিনিকে ৩০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।

আক্রান্ত মোট ৩৯১ জনের মধ্যে বাকিরা বাসায় চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রব সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা, ডেঙ্গু এবং চিকনগুনিয়া- এ তিনটা ভাইরাল ফিভারের রোগী আমরা চমেক হাসপাতালে বেশি পাচ্ছি। ডেঙ্গুর সিজন তো মাত্র শুরু হয়েছে। এখনও গতবছরের মতো সিরিয়াস তেমন কোনো রোগী পাইনি, একটা-দুইটা ছাড়া। স্বাভাবিক জ্বর আর সঙ্গে প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে, তবে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে যাচ্ছে।’

২০২৪ সালে চট্টগ্রামে ৪ হাজার ৩২৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল, এর মধ্যে ৪৫ জন মারা যান।

দুই বছর আগে ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। ওই বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১০৭ জন। আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৪ হাজার ৮২ জন।

২০২১ সালে চট্টগ্রামে ২৭১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল। মারা যায় ৫ জন। ২০২২ সাল থেকে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। ওইবছর চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরী মিলিয়ে ৫ হাজার ৪৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন। ‍মৃত্যু হয়েছিল ৪১ জনের।

২০২৩ সালের জুলাইয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মাঠপর্যায়ে জরিপ করে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে ৪৯১টি হটস্পট চিহ্নিত করেছিল। এরপর চিহ্নিত হটস্পট এবং যে বাসায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গিয়েছিল, তার আশপাশে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখন ওষুধ ছিটানো হয়।

এবারের কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাইলে চসিকের মশক ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আপাতত আমরা এলাকাভিত্তিক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছি। এর বাইরে মশা নিধনে আমাদের রুটিন ওয়ার্ক তো চলছেই। প্রত্যেক ওয়ার্ডে সকালে লার্ভিসাইড ছিটানো হচ্ছে, ফগিং চলছে। যেসব এলাকা থেকে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য পাচ্ছি, সেখানে বেশি ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে আমরা এডিস মশার সম্ভাব্য প্রজননক্ষেত্র অপসারণের কাজ শুরু করব।’

সারাবাংলা/আরডি/এইচআই

এডিস মশা চট্টগ্রাম ডেঙ্গু ডেঙ্গু আক্রান্ত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর