ঢাকা: সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের জন্য নির্মিত ‘রাজহংস’ নামের একটি হাউজবোট সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। ওই নেতা হলেন- মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মমিনুল হক বেনু। এমনকি, হাউজবোটটি ফেরত নিতে হলে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন তিনি। যার কলরেকর্ড সারাবাংলার হাতে রয়েছে।
জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলার বাসিন্দা দীপংকর চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন উদ্যোক্তা সুনামগঞ্জে হাউজবোট ‘রাজহংস’ তৈরি করেন। এটি তৈরির শুরু থেকে স্থানীয় মিয়া নামের এক শ্রমিককে দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে দায়িত্বে অবহেলা ও হিসাবে গড়মিল থাকার কারণে মিয়াকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। এর পর সর্বশেষ বোটটির দায়িত্ব দেন ফুল মিয়া নামের আরেক শ্রমিকের কাছে। আর তা নিয়ে মিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে তাতে শরিক হন বিএনপি নেতা মমিনুল হক বেনু। তিনি সমস্যা নিরসনের নামে তার সন্ত্রাসীবাহিনী দিয়ে ফুল মিয়াকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হাউজবোট নিয়ে যান। পরে ‘রাজহংস’ নাম মুছে ফেলে বোটটিতে নিজের নাম বসিয়ে দখলে নেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী দীপংকর চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মমিনুল হক বেনু দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কৌশলে হাউজবোটটি দখলের চেষ্টা করে আসছিলেন। সম্প্রতি মধ্যনগর থানার ওসির নাম ব্যবহার করে ফুল মিয়াকে থানায় ডেকে এনে বেনু মিয়ার লোকজন বোটটি বুঝে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এর পরের দিন বেনু মিয়া তার সন্ত্রাসীবাহিনী নিয়ে এসে জোরপূর্বক বোটটি দখল করে এবং নাম পরিবর্তন করে তা পরিচালনা করছে। এমনকি, আমি মধ্যনগরে যেতেও পারছি না। কারণ, সে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার নৌকাটি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। বোট দখল করায় আমরা তরুণ উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এ বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের জানালে তারা বেনুর সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু মমিনুল হক বেনু দলের সিনিয়র নেতাদের কথাও শুনছেন না। বেনুর এই কর্মকাণ্ডে তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছি।’
বোট দখলের অভিযোগের বিষয়ে মমিনুল হক বেনু সারাবাংলাকে বলেন, ‘দীপংকর মৌখিকভাবে বোটটি আমাকে দিয়ে দিছে। এখন এটি আমার। আমি বোটের নামে টাকা নিয়ে খেয়েছি, সেটা তো আমি পরিশোধ করতে পারব না। বোট নিতে হলে ১০ লাখ টাকা লাগবে। আমি বিএনপি করি, মানুষের বাড়ি-ঘর, সিন্দুক লুইট্টা পুইট্টা নিতাছিগা। আর এটা তো বোট। কিছু বলার মতো কেউ নাই।’
তিনি বলেন, ‘বোটের তো দলিল নাই যে, জায়গা-জমির মতো বললেই হবে- এটা নিয়ে গেছে। দলিল থাকলে দাগনের মতো একটার পর একটা সিরিয়াল থাকতো। দীপংকর বোট নিতে আসলে তার হাড়-গোড় খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি উপজেলার যুগ্ম আহ্বায়ক, আমি ন্যায় বিচারক।’
এ বিষয়ে মধ্যনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আজ আরেকজনের কাছে শুনেছি। ভুক্তভোগী থানায় এখনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।’