Thursday 26 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এইচএসসি পরীক্ষা
পরীক্ষার্থী কমেছে ৮২ হাজার, নিবন্ধন করেও নেই সোয়া ৪ লাখ

নাজনীন লাকী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৬ জুন ২০২৫ ১৭:২০ | আপডেট: ২৬ জুন ২০২৫ ১৭:২৫

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫, তেজগাঁও কলেজ। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই পরীক্ষা চলবে ২১ আগস্ট পর্যন্ত। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ ছাত্র এবং ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ ছাত্রী। সারাদেশে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে। তবে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গতবারের চেয়ে পরীক্ষার্থী কমেছে ৮১ হাজার ৮৮২ জন। আর ভর্তির সময় নিবন্ধন করেও প্রায় সোয়া চার লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না। বিষয়টিকে বেশ উদ্বেগজনক ও আশঙ্কার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

পরিসংখ্যান বলছে, এবার প্রায় সাড়ে ১২ লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও শেষ তিন বছরের মধ্যে এবারই এইচএসসি পরীক্ষার্থী সবচেয়ে কম। এ অবস্থায় আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের প্রধান বলছেন, যথাযথভাবে জরিপ করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাবা হবে। আর কিছু শিক্ষার্থী কমে যাওয়াকে স্বাভাবিক বলেও মনে করেন তিনি।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির পর রেজিস্ট্রেশন করেও প্রায় সোয়া চার লাখ শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না। শতাংশের হিসাবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এই হার বেশি। আর সংখ্যায় তা এইচএসসিতে বেশি। এই তথ্য নিয়মিত শিক্ষার্থীদের, অর্থাৎ যারা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করে সরাসরি উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিলেন।

এর বাইরে কোনো কারণে গ্যাপ দেওয়া বা ফেল করা অর্থাৎ অনিয়মিত প্রায় দুই লাখ পরীক্ষার্থীও এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে এবার মোট পরীক্ষার্থী ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন। কিন্তু নিবন্ধন করেও পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া ও গতবারের চেয়েও পরীক্ষার্থী কমার কারণ খতিয়ে দেখতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক এসএম হাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতবারের চেয়ে পরীক্ষার্থী কমে যাওয়া, সেইসঙ্গে ভর্তির সময় নিবন্ধন করেও প্রায় সোয়া চার লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া উদ্বেগজনক ও আশঙ্কার।’

তিনি বলেন, ‘যথোপযুক্ত গবেষণা ছাড়া কিছু বলা সম্ভব না। তবে আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে অনুমানিক ধারণা থেকে বলা যায়, বিগত সময়ে বেশ কিছু প্রেক্ষাপট এর জন্য দায়ী। যেমন করোনা সময়ের প্রেক্ষাপট, এরপর পরবর্তী সময়ে অটোপাস করিয়ে দেওয়া, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পড়া, রাজনৈতিক পরিস্থিতি- সব মিলিয়ে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির পর্যাপ্ত ঘাটতি রয়েছে।’

ঢাবির এই অধ্যাপক জানান, প্রতিবছর প্রতিটি পরীক্ষায় কিছু পরীক্ষার্থী তো ঝরে পড়েই। তবে এবারের পরীক্ষার্থী কম হওয়ার প্যাটার্নটা ভিন্ন, আর সংখ্যাটাও বেশি। তাই গবেষণা করে এর পেছনের কারণগুলো বের করার পরামর্শ দেন তিনি। সেটা করা গেলে, কোথায় কোথায় সম্যসা আছে, সে হিসেবে জরুরিভাবে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। সেইসঙ্গে প্রণোদনাসহ চাকরির নিশ্চয়তা পাওয়ার মতো উদ্যোগ না নিলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমানো যাবে।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেশকিছু কারণে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। বেশকিছু কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া, বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি, সংসার সামলাতে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া।’ এ সব কারণগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে পদক্ষেপ নিলে এ হার কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

এ সময় তিনি অভিযোগের সুরে জানান, বিগত ২০ বছর ধরে তিনি এইচএসসি পর্যন্ত বৃত্তি ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সকলের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ জন্য সরকারের সদিচ্ছা এবং সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়াকে দায়ী করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, বিভিন্ন দেশে শিক্ষা খাতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগগুলো প্রশংসনীয়। শ্রীলংকাতে সকারের বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনিয়োগ করে থাকে। যদিও আমাদের দেশে ব্যাংকিংখাতের অবস্থা খুব বেশি ভালো নেই। তার পরও প্রত্যাশা, ঝরে পড়া রোধে ব্যাংকিং বা বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসবে।

ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা গ্রাম এলাকায় বেশি। বিশেষ করে সিলেটসহ দেশের হাওর অঞ্চলে। তাই এসব এলাকায় ঝরে পড়া রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি। এ জন্য তিনি তিনটি পরামর্শের কথা জানান।

পরামর্শগুলো হলো- প্রথমত, সরকারি সহায়তা দেওয়া, এমন পদক্ষেপ নেওয়া যেন আজকের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা আগামীতে তাদের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে নিতে পারে। দ্বিতীয়ত, ঝরে পড়া রোধে ব্যাংক বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে একত্র করে এ বিষয়ে সহায়তা দেওয়া। তৃতীয়ত, সমাজেরও একটা দায় থাকে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাকদের সমন্বয়ে সচেতনতা বাড়ানো ও সহায়তার মাধ্যমে ঝরে পড়াদের নিয়ে কাজ করা।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড যা বলছে

কিছু শিক্ষার্থী কমে যাওয়াকে স্বাভাবিক বলে মনে করেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দকার এহসানুল কবির। সারাবাংলাকে তিনি জানান, দেশে সাধারণত ওপরের শ্রেণিতে উঠলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়ে। পিএসসিতে যদি ৩০ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নেয়, জেএসসির সময় এসে তা দাঁড়ায় ২৪ লাখে। ধারাবাহিকভাবে পরের পরীক্ষাগুলোতেও কমে আসে এই সংখ্যা।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে যথাযথভাবে জরিপ করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করা হবে বলে জানান এহসানুল কবির। সরকার ঝরে পরে শিক্ষার্থীর হার কমাতে নানা ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান তিনি। আগামীতে সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে আসবে- এমনটাই প্রত্যাশা তার।

সারাবাংলা/এনএল/পিটিএম

৮২ হাজার এইচএসসি পরীক্ষা কমেছে পরীক্ষার্থী সোয়া ৪ লাখ