খুলনা: খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে খুলনা। ‘জুলাই অভ্যুত্থানকারী ছাত্রজনতা’র ব্যানারে গত ২৫ জুন থেকে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচি তীব্র আকার ধারণ করেছে।
পুলিশের এক উপ-পরিদর্শককে (এসআই) গ্রেফতারের পর ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হলেও, মূলত পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে শনিবার (২৯ জুন) দুপুর ১২টা থেকে ‘খুলনা অচল’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে ‘বিপ্লবী ছাত্র জনতা, খুলনা’র পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি এসআই সুকান্ত নামের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এসআই সুকান্ত পুলিশলীগের মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল, বহু অপকর্মের হোতা এবং চার মামলার আসামি। কিন্তু তাকে রাতের আঁধারে ছেড়ে দেওয়া হয়, যা পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের নির্দেশেই ঘটেছে বলে তারা দাবি করেন। এই ঘটনাকে তারা কমিশনারের ‘অপকর্মের কফিনে শেষ পেরেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, জুলফিকার আলী হায়দার কেএমপি কমিশনার হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত চার মাসে খুলনাবাসী অন্তত তিন ডজন হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছে। কমিশনার খুলনার ‘সকল সন্ত্রাসী ও লীগারদের ত্রাতা’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অপরাধীরা তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে শহরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আন্দোলনকারীদের দাবি, পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার শুরু থেকেই জুলাই অভ্যুত্থানকারী ছাত্রজনতার প্রতি বিরূপ মনোভাব দেখিয়েছেন এবং তাদের সহযোগিতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের আরও অভিযোগ, বিভিন্ন থানা থেকে আটক চিহ্নিত আসামিদের ছেড়ে দেওয়া, অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়া এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার নিরুৎসাহিত করতে কমিশনার সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন। এছাড়া, অযোগ্য ও দলীয় বিবেচনায় বিভিন্ন থানার ওসি এবং কেএমপির গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা পদায়নের অভিযোগও তোলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কর্মসূচি ও আল্টিমেটাম
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা পুলিশ কমিশনার, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিশনারের পদত্যাগের দাবি পূরণ না হলে শনিবার দুপুর ১২টা থেকে খুলনা শহর অচল করে দেওয়ার কর্মসূচি পালন করা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ব্যাপারে ছাত্র-জনতা অঙ্গীকারবদ্ধ বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এরই মধ্যে খুলনার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।