ঢাকা: বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রা। এটি মূলত ভগবান জগন্নাথ, তার ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রার রথে চড়ে মন্দির থেকে বাইরে আসার একটি প্রতীকী আচার, যা লাখ লাখ ভক্তের অংশগ্রহণে উৎসবে পরিণত হয়।
বিশেষত ওড়িশার পুরী ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় রথযাত্রা এক অনন্য ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক আবহ তৈরি করে।
রথযাত্রার ধর্মীয় তাৎপর্য
রথযাত্রা হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ভগবান জগন্নাথের বার্ষিক ভ্রমণ বা ‘গুন্ডিচা যাত্রা’। পুরীতে এই দিন জগন্নাথ মন্দির থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে তার মাসির বাড়ি বলে বিবেচিত ‘গুন্ডিচা মন্দিরে’ যাত্রা করেন।
এই যাত্রা হল ঈশ্বরের সবার কাছে আসার প্রতীক—ধনী, দরিদ্র, জাত-পাত নির্বিশেষে সকলের জন্য তার দরজা খোলা। একে বলা হয় ‘ভক্তি আন্দোলনের উৎসব’, যেখানে ঈশ্বর নিজেই ভক্তদের কাছে যান।
উৎসবের আচার ও রীতি
রথযাত্রা সাধারণত আষাঢ় মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বিশাল কাঠের রথে তিন দেবতার বিগ্রহ বসিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়। হাজারো ভক্ত রশিতে টেনে রথ এগিয়ে নিয়ে যান। এটি শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক সৌহার্দ্য ও সহাবস্থানের এক মহান বার্তা বহন করে।
বাংলাদেশের ঢাকার ধানমন্ডি, সিলেটের চৌহাট্টা, চট্টগ্রামের চাঁন্দগাঁও, পটিয়া, কুমিল্লার দেবিদ্বার, দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দিরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে রথযাত্রা জাঁকজমকভাবে পালন করা হয়।
মেলা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন
রথযাত্রাকে ঘিরে বসে রথমেলা, যেখানে হস্তশিল্প, প্রসাদ, পিঠা, খেলনা, কীর্তন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুখরিত থাকে চারপাশ। এটি গ্রামীণ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও লোকজ কৃষ্টির এক জীবন্ত মঞ্চে রূপ নেয়।
সম্প্রীতির প্রতীক
বাংলাদেশে রথযাত্রা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, এটি এখন এক সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বহু মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান নাগরিকও রথের টানে রাস্তায় ভিড় করেন। এটি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শান্তি, সহনশীলতা ও একতার এক বাস্তব উদাহরণ।
রথযাত্রা ধর্মীয় আনুগত্যের পাশাপাশি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। ভগবানের সঙ্গে ভক্তের সম্পর্ককে মজবুত করার এই আয়োজন যুগ যুগ ধরে মানবতার বার্তা দিয়ে যাচ্ছে।