Friday 27 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মালয়েশিয়ায় ‘বাংলাদেশ উৎসব’ উদযাপন

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট
২৮ জুন ২০২৫ ০০:১৪

‘বাংলাদেশ উৎসব’ উদযাপন

ঢাকা: নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘বাংলাদেশ উৎসব’ উদযাপন করেছে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন। এ উপলক্ষ্যে রাজধানী কুয়ালালামপুরের ক্রাফট কমপ্লেক্সে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

শুক্রবার (২৭ জুন) মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশ উৎসবে সুমধুর গান, দৃষ্টিনন্দন নাচ, ফ্যাশন শো এবং ঐতিহ্যবাহী দেশীয় খাবারের মাধ্যমে আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের ঐতিহ‍্যবাহী রিকশাসহ অন‍্যান‍্য দেশীয় কারুপণ্য দিয়ে সাজানো হয় অনুষ্ঠানস্থল। এ ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

বিজ্ঞাপন

মালয়েশিয়া ট্যুরিজম, আর্টস এবং কালচার মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল ওয়াইবিএইচজি দাতো শাহারুদ্দিন বিন আবু সহত অনুষ্ঠানে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, কুয়ালালামপুরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিপুল সংখ‍্যক কূটনীতিক ছাড়াও শিক্ষাবিদ, প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতারা, সাংবাদিক এবং হাই কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।

হাইকমিশনার শামীম আহসান ও তার সহধর্মিণী পেন্ডোরা চৌধুরী আমন্ত্রিত অতিথিদের উষ্ণভাবে বরণ করে নেন এবং সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ট্যুরিজম, আর্টস এবং কালচার মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল তার বক্তৃতায় বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার দ্বি-পাক্ষিক চমৎকার সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার মত বাংলাদেশও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ও বহু জাতি-গোষ্ঠীর দেশ। ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভাল’ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত সমাজের চিত্র তুলে ধরেছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয় ‘ তিনি বাংলাদেশের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

হাইকমিশনার শামীম আহসান তার বক্তৃতায় শুরুতে ‘৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ‘২৪ এর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সব শহিদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং বীর যোদ্ধাদের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। এ ছাড়া তিনি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্ণিল উৎসবের দেশ। আমরা আমাদের বিশ্বাস, জীবন, স্বাধীনতা, প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং অর্জনগুলো বছরব্যাপী বিভিন্ন মেলা এবং উৎসবের মাধ্যমে উদযাপন করি, যা প্রচুর উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সঙ্গে আয়োজিত হয়। হাই কমিশনের জনকূটনীতির অংশ হিসেবে আমাদের বিশিষ্ট বিদেশি বন্ধুবান্ধব এবং প্রবাসীদের নিয়ে এ উৎসব আয়োজন।’

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শপথের পরপরই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. আনোয়ার ইব্রাহীম প্রধান উপদেষ্টাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান এবং প্রথম সরকার প্রধান হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেন। বিপ্লব পরবর্তী প্রথম সরকার প্রধান হিসেবে ২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর দাতো সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের বাংলাদেশ সফর, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব এবং ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি মালয়েশিয়ার দৃঢ় সমর্থন প্রদর্শন করে। এ বছরই বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়ায় ফিরতি সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে হাইকমিশনার জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘একজন কূটনীতিক হিসেবে, আমরা বিশ্বাস করি যে সংস্কৃতি দেশ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বৃহত্তর বোঝাপড়া তৈরি করতে এবং তাদের মধ্যে ভুল ধারণা দূর করতে একটি অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে।’

তিনি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে পারস্পরিক মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও ঐতিহাসিক বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, জ্বালানি, পর্যটন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করেছে।’

আলোচনা সভার পরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, প্রবাসী বাংলাদেশি ও হাই কমিশন পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অতিথিদের মুগ্ধ করে। বিশেষত বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী মেহরিনের পরিবেশনা অনুষ্ঠানে বাড়তি মাত্রা যোগ করে।

আমন্ত্রিত অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী রকমারি বাংলাদেশি খাবার দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে কর্মরত দুজন পেশাদার শেফ কর্তৃক রান্না করা খাবার বিশেষত ‘স্মোকড্ ইলিশ’ বিদেশি অতিথিদের দ্বারা প্রশংসিত হয়।

অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে স্থাপিত বাংলাদেশ কর্নার, রিকশা, ফুচকা, চা ও ঝাল-মুড়ির স্টল এবং পিঠা ঘর উপস্থিত বিদেশি অতিথিদের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশি প্রখ্যাত কোম্পানি প্রাণ, মৈত্রী এবং হোপ তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করে এবং ন্যাশনাল ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক রেমিট্যান্স হাউজ বুথ স্থাপনের মাধ্যমে তাদের সেবা প্রবাসীদের অবহিত করে।

মালয়েশিয়ার সেক্রেটারি জেনারেলকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানির ফ্রেম উপহার দেওয়া হয়।

সারাবাংলা/একে/এইচআই

বাংলাদেশ উৎসব মালয়েশিয়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর