ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর চলমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ফলে আমদানি ও রফতানিকারকদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসবে, যা হবে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি অশনি সংকেত। এমতাবস্থায় সঙ্কট নিরসনে আর সময় ব্যয় না করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিডা’র যৌথ উদ্যোগে আজকের (শনিবার) মধ্যে সরকারের তরফ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
একই সঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ নয়, দক্ষ ও হয়রানিমুক্ত এনবিআর প্রতিষ্ঠার জন্য সংস্থাটির সংস্কারেরও জোর দাবি জানান তারা।
শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান তারা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় ১৩টি সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতারা এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, এই আন্দোলনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়াল ঠেকে গেছে।
সেই সঙ্গে এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ ন্যায়সঙ্গত সুরক্ষা ও দেশের অর্থনীতি যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য এখনই জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা। পাশাপাশি আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশের অর্থনীতির স্বার্থে কলমবিরতি ও কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে শর্ত ছাড়া কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বানও জানান ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রতি পাঁচ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে- ১. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিবিধ সেবা বিশেষত আমদানি ও রপ্তানি সংশ্লিষ্ট সেবা বন্ধে ঘোষিত কর্মসূচি থেকে অবিলম্বে তাদের সরিয়ে এনে উক্ত সেবার অব্যাহত প্রবাহ নিশ্চিত করা হোক।
২. উত্তম কর তথা রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও প্রণীত নীতি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে আলাদাকরণ সংক্রান্ত তর্কিত অধ্যাদেশ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠির প্রভাবমুক্ত করে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা ও আমাদের জাতীয় বাস্তবতার আলোকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামগ্রিক আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে পরস্পরের পরিপূরক করে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাস্তবায়ন করা হোক।
৩. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সার্বিক উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব জাতীয় প্রতিষ্ঠানে হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক।
৪. বিনিযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্য সরবরাহ তথা সাপ্লাই চেইনের উন্নয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেগুলেটরি ও ফ্যাসিলিটেটিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক ও সমন্বিত উন্নয়নের লক্ষ্যে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে অনতিবিলম্বে সংস্কার বা আধুনিকায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে সময়াবদ্ধ পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন করা হোক।
৫. উপরোক্ত উদ্দেশ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে নির্দেশ দেওয়া হোক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা এলএফএমইএবি সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মেট্রো চেম্বার সভাপতি কামরান টি রহমান, সিরামিকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিসিএমইএর সভাপতি মঈনুল ইসলাম, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, মেট্রো চেম্বারের সহসভাপতি ও ট্রান্সকম লিমিটেডের গ্রুপ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান প্রমুখ।