ঢাকা: ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠনের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেছেন, সরকার আইএসপি থেকে ৬০ শতাংশ রাজস্ব নেয়, সেই জায়গা থেকে সাশ্রয়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট পাওয়া সম্ভব নয়। তারপরও আমরা কম দামে ভালো ইন্টারনেট সেবা দিতে চাই। এ জন্য একটি ভালো পলিসি দরকার।
শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে টেলিকম বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবি আয়োজিত ”প্রস্তাবিত খসড়া টেলিকম নীতিমালা; আইএসপি শিল্পের চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক কর্মশালায় শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
আইএসপিএবি সভাপতি বলেন, আইএসপি ছাড়া সবার জন্য ফ্লোর ও সিলিং বেধে দেওয়া হয়েছে। কিন্ত আইএসপিএবি শুধুমাত্র সিলিং বেঁধে দিয়ে যুদ্ধে নামিয়ে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আইএসপি ব্যবসায়ীদের দাবি তাদেরও ফ্লোর প্রাইস দেয়া হোক। এনটিটিএনদের জন্য এক দেশ এক রেট করা হোক। মোবাইল অপারেটরদেরও ফ্লোর ও সেলিং প্রাইস বেধে দেওয়া হোক। জুলাই থেকে বিটিআরসি প্রস্তাবিত ৪০০ টাকার ইন্টারনেটের বদলে ৮০০ টাকায় দেশজুড়ে মান সম্মত সেবা দেওয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনটি।
তিনি বলেন, আমরা রেভিনিউ শেয়ার কনসেপ্টে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা চাই আমাদের অ্যাক্টিভ শেয়ারিং দিয়ে এই খাত বৈষম্যমুক্ত করা হোক। ব্যবসায়ীরা নয় সোশ্যাল অবলিগেশনের দায়িত্ব সরকারের। ব্যবসায় নানা বৈষম্য সৃষ্টি করেও ব্যাসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বিটিআরসি ইন্টারনেটের দাম ৫০০ থেকে ৪০০ টাকায় চাপেয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি আমিনুল হাকিম।
দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি বলেছেন, এটা মেনে নেওয়া হবে না।
কর্মশালায় সরকারকে ঘন ঘন নীতিমালা পরিবর্তন থেকে সরে আসার আহ্বান জানান সাবেক সভাপতি ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা এ শিল্প যেন আগামীতে ধ্বংসের মুখে না পরে সে জন্য সরকারকে পলোসিগত জটিলতা দূর করতে হবে।
কর্মশালায় আইএসপি’র চ্যালেঞ্জ বিষয়ে এই খাতের খরচের খাত তুলে ধরে ইন্টারনেট সেবাদাতা মোবারক হোসেন বলেন, তারের জঞ্জালটা তৈরি করেছে সরকারের পলিসি। পলিসি জট তৈরি করে সরকার আইএসপিদের বিরুদ্ধে নিকৃষ্টমানের সেবা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছে বলে আক্ষেপ প্রকাশ করা হয় এই কর্মশালায়।
এ সময় তিনি আরও জানান, আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো একজন গ্রাহককে ৫০০ টাকায় যে ইন্টারনেট সেবা দেয় তার মধ্যে ২০০ টাকাই সরকারের রাজস্ব খাতে চলে যায়। ফলে মোট খরচের ১৮-২০ শতাংশ ট্রান্সমিশন খরচ কমিয়ে সরকার ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়টি অবান্তর ও স্বস্তা রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়। এর পরেও রয়েছে বসুন্ধরা ও নিকেতনের মতো হাউজিং সহ স্থানীয় পর্যায়ের অদৃশ্য চাঁদা। বিপরীতিতে অটোরিকসার দামে মার্সিডিজ বেঞ্চের সেবা দিতে বলছে বিটিআরসি। অথচ তাদেরকে এসওএফ ফান্ড থেকে কোনো সহায়তাও করা হয় না। একইসঙ্গে বিদেশী কোম্পানির জন্য বেশি দামে সেবা নেয়ার প্রচারণা চালানো হলেও দেশের প্রতিষ্ঠানের জন্য শুধু কম দামের সেবা নিয়ে বলা হচ্ছে। যদি অ্যাক্টিভ শেয়ারিং করা হলে ৭০ শতাংশ সুবিধা বাড়বে গ্রাহকের।
কর্মশালায় বিটিআরসি’র ভেতরেও মোবাইল অপাররেটররা আইএসপিদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রোপগাণ্ডা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আইএসপিএবির সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম।
তিনি বলেছেন, প্রস্তাবিত খসড়া টেলিকম নীতিমালায় দেশীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা নেই। বরং বিদেশী কোম্পানির স্বার্থ সুরক্ষা হবে। টেলিকম খাতের প্রতিটি লাইসেন্সই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
কর্মশালায় আইএসপি সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া বলেছেন, অ্যাক্টিভ শেয়ারিংয়ের অভাবে দেশের প্রচুর অর্থের অপচয় কমাতে এরই মধ্যে আমরা ১ জিবিপিএস কমন রাস্তা করে ধানমন্ডিতে ৭৭টি আইএসপি একসঙ্গে উচ্চগরি সিমলেস সেবা দিয়ে নজির স্থাপন করেছে।
টিআরএনবি সভাপতি সমীর কুমার দে এর সঞ্চালনায় কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।