ঢাকা: সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) ভোট হলে কোনো দল ‘জালেম’ হওয়ার সুযোগ পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব করেন।
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘দেশের সকল মানুষের ভোটের দাম সমান। কারও ভোট যাতে অবমূল্যায়ন না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয়কক্ষে অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তাদের সেই অনুপাতে আসন থাকবে। এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সকলের মতের প্রতিফলন ঘটবে। কোনো দল জালেম হওয়ার সুযোগ পাবে না। এটা জেনজির দাবি। এটা এখন জনগণের দাবি। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের দাবি। সকল ধর্মের মানুষেরও দাবি। আজকের এই মঞ্চ প্রমাণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার রক্ত দিয়েছি, কিন্তু সফলতা পাই নাই। কারণ, আমরা প্রতিবারই নেতা ও নীতি বাছাই করতে ভুল করেছি। আমরা ৫৪ বছরে অনেক দলকে দেশ শাসন করতে দেখেছি। কিন্তু ইসলামকে এখনো ক্ষমতায় নিতে পারি নাই। এবার ইসলামপন্থীদের ঐক্যের ব্যাপারে গণপ্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।’
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই ইসলামপন্থী সকল ভোট একবাক্সে আনার কথা বলে আসছি। আগামী নির্বাচনে শুধু ইসলামী দলই নয়, বরং দেশপ্রেমিক আরও অনেক রাজনৈতিক দলও একবাক্স নীতিতে আসতে পারে। যদি আমরা একত্রে নির্বাচন করতে পারি, যদি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে পারি, তাহলে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরাই হবে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের হাতেই আসবে।’

ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ। ছবি: সারাবাংলা
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের ফসল। এত জনসমর্থন নিয়ে আর কোনো সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে নাই। আমরা নিঃস্বার্থভাবে এই সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছি। সরকারকে বলব, সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের যে অঙ্গীকার নিয়ে আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকুন। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবেন না। নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করুন। আমরা আপনাদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব।’
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক চরিত্র, চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে অবস্থার এখনো কোনো পরিবর্তন হয় নাই। একটি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। কারও নাম ধরে সমালোচনা করতে চাই না। তবে পুরোনো রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি জিইয়ে রাখার চেষ্টা সহ্য করা হবে না। রাজনীতির নামে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি অবশ্যই প্রতিহত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য হবে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গণমানুষের জীবনমান উন্নত করা। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিরাপদ দেশ গড়ে তোলা। মানুষের বিশ্বাস ও চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। আমরা একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই।’

ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ। ছবি: সারাবাংলা
কৃষক ও শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অতীতে কেউ আপনাদের স্বার্থ রক্ষা করে নাই। আপনাদের শ্রম ও ঘামের প্রকৃত মূল্য কেউ দেয় নাই। ইসলামী শক্তি ক্ষমতায় এলে আপনাদের স্বার্থ নিশ্চিত করা হবে। ব্যবসায়ী ভাইয়েরা, আপনাদেরকে পদে পদে চাঁদা দিতে হয়। প্রশাসনিক হয়রানীর শিকার হতে হয়। বিদ্যুত ও জ্বালানী নিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ঋণ পাওয়া নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হতে হয়। আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আগামীর বাংলাদেশ হবে ব্যবসা-বান্ধব বাংলাদেশ।’’
তরুণদের উদ্দেশে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘তোমরা আমাদের ভবিষ্যত। তোমাদের সম্ভাবনা বিকাশের জন্য আমরা ওয়াদাবদ্ধ। আমি আমার প্রিয় তরুণ-যুবকদের আশ্বস্ত করতে চাই, আগামীর বাংলাদেশে তোমরাই হবে মূল শক্তি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তার ব্যবস্থা করবে। তোমাদের জীবনের প্রথম ভোট হোক সত্যের পক্ষে, কল্যাণের পক্ষে, ইসলামের বাক্সে। যদি তোমরা এটা করতে পার, এ দেশকে আমরা গড়ে তুলব। আমাদেরকে কেউ দমাতে পারবে না। আমরা কথা দিচ্ছি, আমাদেরকে দায়িত্ব দিলে দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তোমাদের উপহার দেব।
প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা এ দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি। আপনারা আমাদের প্রেরণা। আপনারা ভিআইপি। আপনাদের উপযুক্ত সম্মান এবং ন্যায্য চাওয়া-পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা তাই করব।’

ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ। ছবি: সারাবাংলা
উলামায়ে কেরামদের উদ্দেশে রেজাউল করীম বলেন, ‘আপনারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই আপনারা অবহেলিত এবং রাষ্ট্রের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আগামী নির্বাচনে আমরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে উলামায়ে কেরামের প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করব।
তিনি বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক চায়। সহযোগীতামূলক সম্পর্ক চায়। নিরাপদ সম্পর্ক চায়। তবে কোনো আগ্রাসী মনোভাব, অবৈধ হস্তক্ষেপ বা চোখরাঙানি প্রত্যাশা করে না। বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং মুসলমান, সকলে মিলেই আমরা বাংলাদেশি। এই দেশ আমাদের সকলের। ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে সকলের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সবার জন্য সমান সুযোগ ও মর্যাদা দেওয়া আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার।’
নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নারীরা আমাদের জনশক্তির অর্ধেক। দেশগঠনে নারীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারীর স্বাধীনতা, সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। আমরা নারীর প্রতি কোনো প্রকার সহিংসতা বরদাশত করব না। নারীকে পণ্য বানাতে দেব না। নারীর প্রকৃত মর্যাদা সমুন্নত করাই আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।’
মহাসমাবেশ থেকে ফিলিস্তিনি জনতার প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। প্রথম কেবলা বায়তুল মুকাদ্দাসের মুক্তিসহ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সব মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি।