Saturday 28 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এক সেকেন্ড দেরি না করে ঘোষণা দেন— আমরা বন্দর লিজ দেব না’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ জুন ২০২৫ ১৯:৩৬ | আপডেট: ২৮ জুন ২০২৫ ২১:০৩

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা ও করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলসহ দেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে পাঁচ আগস্টের পর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বামজোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, এক সেকেন্ড দেরি না করে ঘোষণা দেন যে আমরা বন্দর লিজ দেব না। আপনারা দেশবিরোধী, সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে পাঁচ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দিবসের পর আমরা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব।

ঢাকা থেকে শুরু হওয়া দুইদিনের রোডমার্চের সমাপনীতে শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের সামনে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশি কোম্পানিকে যুক্ত করার পদক্ষেপ, রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোরের উদ্যোগ, স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশকে ‘সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে’ জড়ানোর চেষ্টা বন্ধের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এদেশের জনগণের কথা বলার অধিকার, ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আমরা গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে স্বৈরাচার হটিয়ে গণতন্ত্রের সংগ্রামে জয়ী হলাম। আমরা শোষণমুক্তির কথা বললাম। আমরা আশা করেছিলাম, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই সরকার, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে জনগণের সেই দায়িত্ব পালন করবে। এত বড় হত্যাকাণ্ড, তার বিচারের কাজ দৃশ্যমান করবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে, নির্বাচনের জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার, তা-ই করবে। আর গণতন্ত্রের পথে যাত্রার জন্য নির্বাচন দেবে।’

সমবেত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করলাম, সরকার এখতিয়ার বর্হিভূতভাবে এমন কতগুলো কাজ শুরু করলেন, যা তাদের সংস্কারের আলোচনায় নেই। ওই যে বন্দর ভবন দেখা যায়, আপনারা চট্টগ্রামের মানুষ, বন্দর কি সংস্কারে ছিল? না, এটা তো ছিল না। তাহলে বন্দর লিজের কথা উঠল কেন? বন্দর কি লোকসানি প্রতিষ্ঠান? না, এটা তো লাভজনক প্রতিষ্ঠান।’

বন্দর ইজারা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরে প্রিন্স বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখানে এসে বললেন, কেউ যদি না বোঝে, তাকে বোঝাতে হবে লিজ দেওয়ার জন্য। আচ্ছা ভালো কথা, আসেন, আপনিও মানুষকে বোঝান, আমরাও বোঝাই, বন্দরের শ্রমিকরা বোঝাক। জনগণ যেটা বলে সেটাই গ্রহণ করব, এটাই তো গণতন্ত্রের ভাষা। কিন্তু ঈদের আগেরদিন ড. ইউনূস কি বললেন? যারা শুনবে না, তাদের নাকি প্রতিহত করবেন !’

‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানকে বলতে চাই, দু’দিন ধরে ঢাকা থেকে রোডমার্চ করে চট্টগ্রামে এলাম। পথে পথে হাজার হাজার মানুষ সংহতি জানিয়েছে, তারা বলেছে- অন্তর্বর্তী সরকারের কথা ঠিক নয়, ওইটা ভুল পদক্ষেপ। আমরা তাই পরিষ্কার বলি, এক সেকেন্ড দেরি না করে ঘোষণা দেন- আমরা বন্দর লিজ দেব না। দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্তভাবে রাষ্ট্রের মালিকানায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে দিয়ে পরিচালনা করব।’

করিডোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার-রোহিঙ্গায় ভুক্তভোগী চট্টগ্রামের জনগণ। তা রোহিঙ্গাদের নিয়ে যায় না কেন ? জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছিলেন- এখানে বহুপাক্ষিক সমাধান করতে হবে, উনারা করলেন না। বরং নতুন করে কি বললেন? রাখাইনকে না কি করিডোর দেবেন, চ্যানেল দেবেন। আমরা বলছি, সেখানে যুদ্ধ চলছে, সেখানে করিডোর দেওয়া মানে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা। এটা আমরা হতে দেব না।’

‘আবার শুনছি, চট্টগ্রামের ইপিজেডে কাতারকে না কী সমরাস্ত্র কারখানা করতে দেবে। চট্টগ্রামের মানুষ কি এটা চায়? কেউ কেউ বলেন, ইপিজেডে সমরাস্ত্র বানালে সমস্যা কী, উনারা তো বানিয়ে সেগুলো নিয়ে যাবে। আচ্ছা, ইপিজেডে যেসব জিনিস বানানো হয়, সেগুলো কি মার্কেটে পাওয়া যায় না? এটাও আমরা মানি না।’

বামজোটের রোডমার্চ কর্মসূচি। ছবি: সারাবাংলা

বামজোটের রোডমার্চ কর্মসূচি। ছবি: সারাবাংলা

স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যে দেশেই তারা (স্টারলিংক) গেছে, তারা আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করেছে। তাহলে এটা কি দেশের পক্ষে? না, এটা দেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী। চারটা পয়েন্টে আমরা রোডমার্চ করলাম, এখন আমাদের সর্বশেষ পরিষ্কার বক্তব্য, আশা করি সরকার গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে এসব দেশবিরোধী, সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে পিছু হটবে। না হলে পাঁচ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দিবসের পর আমরা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব। দেশ ও সার্বভৌমত্ববিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ড আমরা রুখে দেব।’

চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা’র সভাপতিত্বে এবং বাসদের জেলা ইনচার্জ আল কাদেরি জয়ের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও গণতান্ত্রিক বাম জোটের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন আহম্মদ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের আহ্বায়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাংলাদেশের সোশ্যালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম।

দেশের বামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের’ ব্যানারে চার প্রধান দাবিতে রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুক্রবার (২৮ জুন) সকালে রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু হয়। কুমিল্লায় সমাবেশ শেষ করে রোডমার্চের বহর ফেনীতে পৌঁছে নেতাকর্মীরা সেখানে রাতযাপন করেন। শনিবার সকালে ফেনীতে সমাবেশের পর রোডামার্চের বহর চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে।

চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড জেলায় সমাবেশ শেষে বিকেল তিনটার দিকে রোডমার্চের বহর নগরীতে প্রবেশ করে। বিকেল চারটার দিকে নগরীর বারিক বিল্ডিং মোড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের চার নম্বর গেইটের সামনে সমাবেশে এসে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে পদযাত্রা করে হাজারো নেতাকর্মী বন্দর ভবনের সামনে যান। সেখানে সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

রোডমার্চে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড। এসবের মধ্যে রয়েছে ‘ইন্টেরিম সরকার, সাম্রাজ্যবাদের পাহারাদার’, ‘বন্দর-করিডর, বিদেশিদের দেব না’, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না’, ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল কর’, ‘মার্কিন, ভারতসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’— এমন আরও স্লোগান।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

বন্দর লিজ বাম মোর্চা রুহিন হোসেন প্রিন্স

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর