‘২০ স্টল ঘুরেছি, কোটি টাকায় ফ্ল্যাট কেনা অসম্ভব’
২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৫:৪১
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা : খুব বেশিদিন হয়নি বিয়ে হয়েছে মাসুদ ও আফসানা দম্পত্তির। তারা সুন্দর একটি নীড়ের সন্ধানে ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন আবাসন মেলার প্রতিটি স্টল। মগবাজারের বাসিন্দা মাসুদ একটি বেসকরকারি ব্যাংকে চাকুরী করেন। কথা হলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ টি স্টল দেখেছি। কোন প্রজেক্টই ১ কোটি টাকার নিচে নয়। আমরা যারা নিন্মবিত্ত তাদের জন্য এতো টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব নয়।’
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলমান পাঁচ দিনব্যাপী ‘রিহ্যাব ফেয়ার-২০১৭’-র তৃতীয় দিন শনিবার দুপুরে কথা হলে মাসুদের মতো আরও অনেকেই একই রকম কথা জানিয়েছেন। খোদ আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও বলছেন, ‘তারা মধ্যবিত্তের জন্য ব্যবসা করেন না। আবাসন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা মধ্যবিত্তের কথা ভুলে গেছে।’
ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের স্টলে কথা হলে এক কর্মকর্তা জানান, ২ হাজার বর্গফিটের নিচে তাদের কোন প্রকল্প নেই। আর তাদের প্রতি বর্গফিটের সর্বনিম্ন দাম ১১ হাজার টাকা। সে হিসেবে তাদের কোন ফ্ল্যাটেরই দাম ২ কোটির নিচে নয়!
একই রকম কথা জানান আবাসন প্রতিষ্ঠান প্রিয় প্রাঙ্গনের স্টলে থাকা এক কর্মকর্তাও। ১৫০০ বর্গফুটের নিচে তাদের প্রকল্প নেই। তাদের ৩ বেড, ২ টয়লেট ও ৩ বারান্দার একটি ফ্ল্যাট কিনতে ক্রেতাকে গুণতে হবে অন্তত ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্কাই ভিউয়ের ম্যানেজার (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) মহিউদ্দিন সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট গ্রুপকে টার্গেট করে থাকি। তারা উচ্চবিত্তও নয়, আবার মধ্যবিত্তও নয়। মূলত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছেন, এমন ব্যক্তিরাই আমাদের ক্রেতা। তাদের যে বাজেট থাকে ফ্ল্যাট বিক্রিতে এটিও একটি সমস্যা।’ তিনি বলেন, ‘১২০০ বর্গফিটের একটি ফ্ল্যাট কিনতেও এখন ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা লাগছে। যারা চাকুরী করছেন তাদের জন্য এতো টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনাটাও একটা সমস্যা। এছাড়া রয়েছে উচ্চ সুদের ব্যাংক ঋণ। আর খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমরা চাইলেও দাম কমাতে পারি না।’
এদিকে উচ্চদামসহ নানা কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেরই ২০ থেকে ৫০ শতাংশ ফ্ল্যাট অবিক্রিত রয়েছে। অবিক্রিত থাকা ফ্ল্যাটের প্রকল্পের সর্বোচ্চ বয়স ২ বছর।
বর্তমানে স্কাই ভিউয়ের ১৫ টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। কথা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ২০ শতাংশ ফ্ল্যাট অবিক্রিত রয়েছে, সেই হিসেবে বিক্রির অপেক্ষায় থাকা ফ্ল্যাটের সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ টি।
ডমইনো বিল্ডার্সের ডিজিএম (সেলস) মাহমুদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ১০০ প্রকল্প চলমান রয়েছে। চলমান প্রকল্পগুলোর ২০ শতাংশ ফ্ল্যাট এখনও বিক্রি হয়নি। সেই হিসেবে প্রায় ৪০০ ফ্ল্যাট অবিক্রিত রয়েছে।’ আবাসন খাতের প্রতিবন্ধকতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন ফি এখনও অনেক বেশি। ব্যাংক ঋণের হার কমানো দরকার, বিশেষত সরকারী ঋণের ক্ষেত্রে। এছাড়া গ্যাসের সংযোগ বন্ধ থাকাও একটি বড় সমস্যা। রডের উপর ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে নির্মাণ খরচ বেড়ে গেছে।’
এদিকে, নাভানার প্রায় ২০ হাজার ফ্ল্যাট অবিক্রিত রয়েছে বলে স্টলে থাকা এক কর্মকর্তা জানালেও নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠান কনকর্ডেরও ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ফ্ল্যাট বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে। আর বিশ্বাস বিল্ডার্সেরও চলমান প্রকল্পগুলোর ২০ শতাংশ ফ্ল্যাট এখনও বিক্রি হয়নি।
আর পার্টেক্স বিল্ডার্সের এজিএম (সেলস) হাসান শাহনেওয়াজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ৫ টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ফ্ল্যাট অবিক্রিত রয়েছে। সেই হিসেবে বিক্রির অপেক্ষায় থাকা ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১২০ টি।’ তিনি বলেন, ‘প্রকল্পগুলো সর্বোচ্চ ১ বছর যাবৎ চলছে। এর মধ্যে কোন কোনটি ২০১৮ সালের মধ্যেই ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা রয়েছে।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একদম প্রস্তুত রয়েছে এমন অবিক্রিত ফ্ল্যাটের সংখ্যা ৩ টি।’
এদিকে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শনিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন স্টলে ক্রেতা দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। স্বামী স্ত্রী তাদের শিশু সন্তানদের নিয়েও এসেছেন। কেউ এসেছে কেবলই দম্পত্তি হিসেবে।
এবারের মেলায় ২০৩টি স্টল রয়েছে। আর মেলায় অংশ নিয়েছে ৩০টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৩টি অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান। মেলায় প্রবেশ করতে সিঙ্গেল টিকেটের মূল্য ৫০ টাকা ও মাল্টিপল এন্ট্রি টিকেটের প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা। ২১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সারাবাংলা/ইএইচটি/জেএ