কুমিল্লা: মুরাদনগর উপজেলায় ধর্ষণের যে খবর ছড়িয়ে পড়েছে তা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন ধূম্রজাল। ভিকটিমের অভিযোগ ধর্ষণ, কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন- পরকীয়ারত অবস্থায় ধরা পড়েছেন তারা।
ঘরে ঢুকে নারীকে ধর্ষণ ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। পরে মূল অভিযুক্ত ফজর আলীসহ (৩৮) সহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঘটনাটির বিস্তারিত জানতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা। স্থানীয়রা বলছেন, ভুক্তভোগী নারী হিন্দু (সনাতন) ধর্মাবলম্বী। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে থাকেন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে। ওই নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক চলছিল ফজর আলীর।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে ফজর আলী ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করেন। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে দুজনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় অতি উৎসাহী কিছু যুবক ওই নারী ও ফজর আলীর বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
খবর পেয়ে শুক্রবার (২৭ জুন) মুরাদনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। একইদিন ওই নারী বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় ফজর আলীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন। এর পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে ফজর আলী এবং ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মুরাদনগর উপজেলার বাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা ও রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী সুমন, অনিক, রমজান ও বাবুকে গ্রেফতার করে। অভিযোগ রয়েছে, সুমনের নেতৃত্বে ওই নারীর আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকে বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থল মেয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখি, অসামাজিক কাজের অভিযোগে ফজর আলীকে মারধর করা হয়েছে। পরে আমরা তার মামাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। তিনি এসে রাত ১টার দিকে তাকে নিয়ে যান।’
তারা আরও বলেন, ‘৪-৫ মাস আগেও ফজর আলীর ছোট ভাই তাদের দু’জনের পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে ফেসবুকে লেখেন। দুই পরিবারও তাদের সম্পর্কের বিষয়ে সতর্ক করে। ভুক্তভোগী নারীকে তার বাবার বাড়িতে না আসতে ফজর আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হয়। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে দুজনকে আপত্তিকর অবস্থায় ধরে ফেলে স্থানীয় লোকজন।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল করিম বলেন, ‘খবর পেয়ে রাত সোয়া ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে দেখি পরকীয়ায় ধরা পড়ায় ফজর আলীকে মেরে গুরুতর আহত করা হয়েছে। ঘরের মধ্যে মেয়েটি বসে আছে। বাইরে বহু মানুষ অবস্থান করছে। পরে ফজর আলীকে তার মামার হাতে তুলে দেওয়া হয়।’
ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন, ‘মাস দুয়েক আগে তাদের পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়ে জানতে পারি। বৃহস্পতিবার ফজর আলী ওই নারীর ঘরে গেলে হাতেনাতে ধরা পড়ে। এ সময় কয়েকজন বখাটে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। তদন্তপূর্বক এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।’
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন বলে জানান কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) নাজির আহমেদ খান। তিনি বলেন, ‘মামলায় ফজর আলীকে প্রধান আসামি করা হয়। এর পর পুলিশের একটি টিম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।’
মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ‘অভিযুক্ত ওই নারীর ধর্ষণ মামলার পর অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ধর্ষণে অভিযুক্ত। বাকি চারজনের বিরুদ্ধে নগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।’
ওই নারীকে শুক্রবার ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে তিনি পরীক্ষা না করে ফিরে চলে আসেন বলে জানা গেছে। পরকীয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘ধর্ষণ মামলা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের কাছে পরকীয়ার কোনো তথ্য নেই।’
এ বিষয়ে ভিকটিম বলেন, ‘ফজর আলী জোর করে ঘরে প্রবেশ করে আমার ওপর অত্যাচার করেছে। এ সময় ঘরে আমার শিশু ছেলে-মেয়ে ছাড়া আর কেউ ছিল না। পরে গ্রামের কিছু ছেলেপেলে এসে আমাকে এবং ফজর আলীকে মারধর করে।’ ফজর আলীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগ মিথ্যা’।
তাহলে মামলা কেন তুলে নেবেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মামলা করাতে আমার প্রবাসী স্বামী রাগ করেছেন। তিনি বলেছেন, সম্মানতো এমনিতেই শেষ, মামলা করে কি সম্মান ফিরে পাবে? তাই মামলা তুলে নিতে চাচ্ছি।’ আপনাকে মামলা তুলে নিতে কেউ হুমকি বা টাকার প্রস্তাব দিয়েছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না মামলা তুলে নিতে আমাকে কেউ হুমকি বা টাকার কোনো প্রস্তাব দেয়নি।’