Monday 30 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামিরা কে কোথায়

রাশেদ মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩০ জুন ২০২৫ ২২:৫২ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫ ২২:৫৫

জুলাই আন্দোলনে শহিদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদ। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই, দুপুর ২টা ৩০ মিনিট। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। পুলিশ এসে হাজির। সঙ্গে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও। মুহূর্তেই ছত্রভঙ্গ শিক্ষার্থীরা। শুধু একা দাঁড়িয়ে আবু সাঈদ। বুক পেতে দাঁড়িয়ে বন্দুকের সামনে। হঠাৎ গুলির শব্দ। কিছুক্ষণ পরই লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে। নিভে গেল মেধাবী এক তাজা প্রাণ।

পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দেওয়া রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীই ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম শহিদ। ১৬ জুলাই খুব কাছ থেকেই তাকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে এর পেছনে আরও ৩০ জনের সম্পৃক্ততা উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ সোমবার (৩০ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। অভিযোগ আমলে নিয়ে পলাতক ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল।

আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানিতে সেদিনের পুরো ঘটনা তুলে ধরেন তিনি। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হাসিবুর রশিদ, রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, সাবেক উপকমিশনার (অপরাধ) মো. আবু মারুফ হোসেন ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম এ হত্যার নির্দেশ দেন। আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় তাদের যৌথ দায় রয়েছে।’

এই চার ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনা পেয়ে এএসআই মো. আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যদের গুলিতে নিরস্ত্র আবু সাঈদ শহিদ হন। একইসঙ্গে চারজন আহত হন। এ হত্যাকাণ্ড ও আক্রমণ-নির্যাতনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে সহায়তা করেন অন্য আসামিরা। এমনকি হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে নিতে বারবার সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তন করা হয়।

তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সূত্রে জানা যায়, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে ৩০ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তা-সদস্য রয়েছেন আটজন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ শিক্ষক রয়েছেন চারজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মকর্তা ও পাঁচ কর্মচারী এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ তথা স্বাচিপের এক নেতা ছিলেন। বাকি নয়জন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

বর্তমানে এ মামলায় কারাগারে রয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের এএসআই আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী। বাকি ২৬ জনকে গ্রেফতার করে আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে হাজির করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-২।

সূত্র বলছে, গেল ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরই দেশ ছেড়ে পালান পোমেল বড়ুয়া। তিনি আবু সাঈদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এই সভাপতি বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। এ ছাড়া, ভিসি হাসিবুর রহমান কানাডায় রয়েছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। নিজের মেয়ে থাকার সুবাদে গ্রেফতার এড়াতে তিনি দেশটিতে আশ্রয় নেন।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডলও গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তিনি দেশেই রয়েছেন বলে জানিয়েছে তার এক ঘনিষ্ঠজন। এ মামলার আরেক আসামি রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সরওয়ার জাহানও পলাতক রয়েছেন। তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এ ছাড়া, আন্দোলনে অংশ নেওয়া মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি। এমনকি পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবদেন বদলাতে বারবার চাপ দিয়েছিলেন। হত্যা মামলার ফরেনসিক রিপোর্ট পরিবর্তনেও চিকিৎসককে বলপ্রয়োগ করেন তিনি। তবে তিনি কোথায় রয়েছেন তা জানা যায়নি। গোপনীয়তার স্বার্থে বাকি আসামিদের নাম প্রকাশ সম্ভব হয়নি।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারপ্রক্রিয়া ঠিকঠাকভাবে এগোচ্ছে। বিচারের জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন সেই গতিতেই চলছে। দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করা ও ন্যায়বিচারের সব স্ট্যান্ডার্ড মেনেই আমরা চলছি। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে এসব কাজ সমাপ্ত করতে হবে। মোবাইল কোর্টের মতো মামলার বিচার শেষ করা এখানে সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, আমরা আমাদের কাজ করছি। বাকি বিচারপ্রক্রিয়া কত দ্রুত এগোবে তা নির্ধারণ করবেন আদালত। আমরা একদিনও বেশি সময় নিচ্ছি না কিংবা নেবোও না। যথাসময়ে বিচার শেষ করতে যা করার আমরা সেটিই করব। বাকিটা আদালতের কার্যধারার ওপর নির্ভর করবে।’

সারাবাংলা/আরএম/পিটিএম

আবু সাইদ হত্যা আসামিরা কে কোথায় মামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর