ঢাকা: জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন বলেছেন, শেখ হাসিনা যেন এ মামলা থেকে অব্যাহতি পান আমি সেই চেষ্টা করব। তাকে খালাস করার জন্য আমার আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আমির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এমন মামলা হয়নি। এটি অতি গুরুতর চার্জের মামলা। এ কারণে আদালতের কাছে আজ সময় চেয়েছি। ১৫ দিন চাইলে আদালত এক সপ্তাহ সময় দেন। আশাকরি এর মধ্যেই প্রস্তুতি নিতে পারব।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আদালতে প্রসিকিশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিমসহ অন্যরা।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে হত্যা চালানো হয়েছে। তার নীতি অনুযায়ী পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা চেইন অব কমান্ড মেনে গণহত্যা চালিয়েছেন। তারা সিস্টেমেটিকভাবে অপরাধ করেছেন। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করতে হবে।
পরে স্টেট ডিফেন্সের আইনজীবী আমির হোসেন আদালতকে বলেন, আমি প্রয়োজনীয় নথিপত্র পেয়েছি। তবে প্রস্তুতি নিতে পারিনি। এজন্য সময় চাই। আদালত তাকে এক সপ্তাহ সময় দেন।
এছাড়া এ মামলার আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আইনজীবী মোহাম্মদ জায়েদ বলেন, শুনানির এ পর্যায়ে আমাদের বক্তব্য নেই। পরবর্তী পর্যায়ে আমরা যুক্তি উপস্থাপন করবো।
এদিকে, আজকের শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন। গত ১৬ জুন এ মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১ জুন শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় বর্তমানে গ্রেফতার রয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এখনও পলাতক রয়েছেন।
এই তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহিদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন।
গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই শেষে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জমা দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।