ঢাকা: বিগত সরকারের আমলে গুম-খুনের শিকার শহিদ পরিবারের আহাজারিতে ভারী হলো বিএনপির বিশেষ আলোচনা সভা।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভায় এ দৃশ্যের অবতারণা হয়।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাইদের ভাই রমজান আলী, মীর মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান, ওয়াসীমের বাবা শফিউল আলম, ইয়ামিনের বাবা মহিউদ্দিন, ফারহান ফাইয়াজের ছোট বোন ফারিন, আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, পুরানা ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাশের বাবা আনন্দ দাস, আবদুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমাতুজ জোহরা, নুরুজ্জামান জনির ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরা, পারভেজ হোসেনের মেয়ে আবিদা ইসলাম হৃদি, কাজী ফাহমীম জাফরের মা কাজী লুললফাহিম, গুম থেকে বেঁচে যাওয়া বিএনপি গণশিক্ষা বিষয়ক সহ-সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকার খোকন এবং ‘মায়ের ডাক’ এর আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম তুলি, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু নাভিল, পুলিশের গুলিতে চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া রেদোয়ান হোসেন রিয়াদ, ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে নির্যাতনের শিকার চিকিৎসক সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্থ এবং গুমের শিকার এম ইলিয়াস আলী সহধর্মিণী তাহমীনা রুশদীর লুনা।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাইদের ভাই রমজান আলী তার বক্তব্যে বলেন, ‘রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈদ যদি বুক পেতে না দাঁড়াত, তহালে হয়তবা দেশের পরিস্থিতি এত সহজ হয়ে আসত না। আমি মনে করি- প্রথম শহিদ আবু সাঈদ রক্ত দিয়ে দেশের সকল পেশাজীবী, দলবল নির্বিশেষে সকলের সাহস জুগিয়েছিল। তার কারণে আজকে এই ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। আমরা সকলেই একটা বাক স্বাধীনতা পেয়েছি। আসলেই বাক স্বাধীনতা আমাদের প্রাপ্য ছিল, সেটা আমরা পেয়েছি।’
পারভেজ হোসেনের মেয়ে আবিদা ইসলাম হৃদি বলেন, ‘২০১২ সালে আমার বাবা গুম হয়েছে। বাবাকে আমরা অনেক খুঁজেছি, কোথাও পাইনি। ৫ আগস্টের পর আমরা ‘আয়না ঘরে’ গিয়েছিলাম। সেখানেও পাইনি। আয়না ঘরের সব চিহ্নও মুছে ফেলা হয়েছে। এখন ফ্যাসিস্ট নাই। তাহলে আয়না ঘরের চিহ্ন মুছে ফেলল কারা। আমরা আমাদের বাবাকে ফিরে পেতে চাই, আমরা আমাদের বাবাকে ‘বাবা’ ডাকতে চাই।’
তাহমীনা রুশদীর লুনা বলেন, ‘‘আমি আমার স্বামীকে হারিয়েছি। পাঁচ আগস্টের পর আমরা গুম কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু, আমরা বুঝতে পারছি না এই কমিশন কী কাজ করছে, কীভাবে কাজ করছে। কয়েক দিন আগে কমিশন থেকে আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছে— ‘আপনার পরিবারে কি কেউ গুম হয়েছে, গুম হওয়া ব্যক্তি কি ফিরে এসেছে?’’
‘‘আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছি, আপনি কোন দেশে থাকেন? আপনি কি কিছুই জানেন না। তাহলে কমিশনে কাজ করবেন কীভাবে? আমরা ঠিক জানি না, তারা কীভাবে কাজ করছে, কী কাজ করছে, এই কাজ করে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারকে তারা কীভাবে সহযোগিতা করবে?’’