ঢাকা: ২০১৬ সালের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা বিদেশি কূটনীতিকরা।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রোর বাসভবনে এক স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রণালয়ের ইতালীয় নাগরিক ও অভিবাসননীতি বিষয়ক মহাপরিচালক লুইজি ভিগনালি এবং ইতালীয় রাষ্ট্রদূত এই অনুষ্ঠানে শুরুতে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধি এবং নিহতদের পরিবার পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে হোলি আর্টিসান হামলার শিকারদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) স্মরণ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম বলেন, বাংলাদেশ সকল ধরণের সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা নীতি’ অনুসরণ করে চলেছে। একইসাথে সকল আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্রে ‘অটল’ রয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাদের দুর্ভাগ্যজনক আত্মত্যাগ আমাদের সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং আমরা সন্ত্রাসবাদমুক্ত একটি বিশ্ব তৈরিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই স্মরণসভা আয়োজনের জন্য তিনি ইতালীয় মিশনের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আজ আমরা কেবল সেই মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণেই ঐক্যবদ্ধ নই, বরং সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার বিশ্বব্যাপী অভিশাপের বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত লড়াইয়ের প্রতি আমাদের অটল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।
আসাদ আলম সিয়াম আরও বলেন, ২০১৬ সালের ১ জুলাই যাদের আমরা হারিয়েছি তাদের আত্মা চির শান্তিতে বিশ্রাম করুক। তাদের স্মৃতি আমাদের উজ্জ্বল, শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করুক।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, হলি আর্টিসান হামলা তাদের মানবতার প্রতি নিষ্ঠুর অবমাননা এবং এটি তাদের ‘প্রাণবন্ত, সহনশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক’ সমাজের একেবারে কেন্দ্রস্থলে ভয় ও বিভাজন ছড়িয়ে দেওয়ার একটি ‘দুঃসাহসী প্রচেষ্টা’। গভীর দুঃখের সাথে, আমরা সেই রাতে হারিয়ে যাওয়া নিরীহ প্রাণের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের নিজস্ব প্রিয় নাগরিকদের পাশাপাশি ভারত, ইতালি, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিয় বন্ধুদেরও তিনি বলেন, তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান, কারণ তাদের বেদনা বাংলাদেশের জনগণ গভীরভাবে অনুভব করে।
পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সাহস এবং উদ্দেশ্যের স্পষ্টতার সাথে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় তাদের মধ্যে দুজন নিহত হয়েছেন। হামলার শোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, আমাদের জনগণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা আমাদের জনগণের শান্তিপ্রিয় নীতিমালাকে বিভক্ত করতে চেয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত সংকল্প প্রদর্শন করেছে বলেও যোগ করেন পররাষ্ট্র সচিব বলেন।
আসাদ আলম সিয়াম আরও বলেন, ‘সেই ভয়াবহ দিনের পর বাংলাদেশ একটি জাতি হিসেবে অনেক দূর এগিয়েছে এবং চরমপন্থা মোকাবেলা এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের সক্ষমতা জোরদার করার জন্য সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ধর্মীয় নেতা, শিক্ষাবিদ এবং নাগরিক সমাজের মাধ্যমে চরমপন্থী ধারণা মোকাবেলায় সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা কর্মসূচি সম্প্রসারিত করেছে; বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলির সাথে তথ্য ভাগ করে নিয়েছে এবং আমাদের প্রাসঙ্গিক আইন শক্তিশালী করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমরা একটি বিশেষ সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছি,’ পররাষ্ট্র সচিব বলেন।
উল্লেখ্য, নয় বছর আগে ২০১৬ সালের এই দিনে (১ জুলাই) গুলশানের হোলি আর্টিসান বেকারির শান্ত প্রশান্তি এক ‘বর্বরতার’ দ্বারা ভেঙে পড়েছিল। ২০১৬ সালের সেই মর্মান্তিক দিনে, ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, দুইজন বাংলাদেশি, একজন মার্কিন-বাংলাদেশি এবং একজন ভারতীয় নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে এবং আরও অনেক আহত হয়।