Tuesday 01 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ঐক্য এবং গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো আপস নেই’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১ জুলাই ২০২৫ ২২:১১

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ঐক্য এবং গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো আপস নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে বিএনপি এ ‘বিশেষ’ আলোচনা সভা আয়োজন করে।

আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা ১৬ বছর ধরে একটা কথাই বলছি- কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যৎ। আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব বলেই তো নদী সাঁতরে সমাবেশ করে সরকারের পতন চেয়েছি। আগেই সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছি। সুতরাং ঐক্য এবং গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো আপস নেই।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বিএনপি উদার গণতান্ত্রিক দল। নির্বাচনের মাধ্যমেই পরিবর্তন চায়। জুলাই সনদের প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। সেটির দায়িত্ব সরকারের। তারাই বলুক যে, কোন বিষয়ে আমরা একমত বা দ্বিমত। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপি কখনও আপস করেনি, করবেও না। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে পারব।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। আমরাই তো ২০২২ সালে প্রথমে ২৭ দফা, পরে ৩১ দফা ঘোষণা করেছি। অথচ বলা হচ্ছে, বিএনপি সংস্কার মানছে না। এটি অপপ্রচার। আপনারা আমাদের সংস্কার প্রস্তাবগুলো দেখুন, বুঝুন। এরই মধ্যে প্রায় অনেকগুলো বিষয়ে যেমন- প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের বিষয়ে একমত হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের আন্দোলনে অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেকেই তাদের মা, বোন, ভাই, ছেলে কিংবা বাবাকে হারিয়েছে। জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকারের বাহিনী শিশু থেকে শুরু করে ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করেছে। অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছে। এই পরিবারগুলো খুবই অসহায়। আজ তাদের দেখে আমি আবেগ-আপ্লুত।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘তারেক রহমান প্রমাণ করেছেন দেশের বাইরে থেকেও দল, দেশ ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়। বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় আসবে, এটি শুধু বিএনপি নয়, অনেকেই ভাবেন। সেজন্যই আমদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও আওয়ামী লীগের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কিন্তু, ঐকমত্য কমিশনে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করছে, যাতে বিএনপি ক্ষমতায় না আসে। আমরাও বলিনি যে, ক্ষমতায় যাব। তবে আমরা ১৭ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নেই। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। নির্বাচন করতে দেওয়া যাবে না বলে যা বলা হচ্ছে সেটি তো অনৈক্যের জন্য। জাতিকে বিভক্ত রেখে দেশের উন্নয়ন ও মঙ্গল করা যায় না।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য একটি হবে, সেটি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য। সেটি ধরে রাখতে হবে এবং সেটিই আমাদের শক্তি। আমাদের স্বপ্ন হবে নতুন বাংলাদেশ, সবার আগে নতুন বাংলাদেশ। পারস্পারিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সম্পর্ক তৈরি হবে। স্বর্গ থেকেও প্রিয় মাতৃভূমি। গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের অবদান ও রক্তের সম্মান আমাদের দিতে হবে। মতভেদ থাকবে কিন্তু সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা এগিয়ে যাব, সেটিই প্রত্যাশা।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কোনো সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। গণতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আরও এগিয়ে যাব।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘একবছর আগের যে চেতনা ছিল সেটি অপস্রিয়মাণ। এটি দুঃখজনক। আমরা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসছি, কিন্তু ঐক্য খুবই নিতান্ত। অন্যদিকে, শত্রুরা বেড়ার ওপরে বসে আছে। তারা যেকোনো মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়বে। সমাজে তাদের দোসররা বিরাজ করছে। সবার কাছে বিনীত আবেদন কালবিলম্ব না করে আসুন জুলাই চেতনাকে জাগরুক করে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে যাই। সবকিছু কিন্তু এই মুহূর্তে সমাধান করা যাবে না। যতটুকু ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি সেটি নিয়েই আপাতত একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করি।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত ‘জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

গণ অভ্যুত্থান গণতন্ত্র জুলাই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর