ঢাকা: সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ১ লাখ কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, গত ২৯ জুন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
সম্পূর্ণ হিসাব পাওয়া গেলে এটি বেড়ে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে বলে আশা করছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
গত সোমবার (৩০ জুন) সকাল সংস্থার আগারগাঁওস্থ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, তবে এখনও পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাওয়া যায়নি। আমরা আশা করছি, সমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা হবে। কিন্তু আদায় হওয়ার কথা ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গত কয়েক দিনের কাজকর্মের কারণে রাজস্ব আদায় হোঁচট খেয়েছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তবে সরকারি বিলগুলো সমন্বয় করলে গতবারের চেয়ে বেশি হবে, এটা নিশ্চিত। আমরা যে রকম আশা করেছিলাম, হয়তো সেটার কাছাকাছি থাকবে।
সব মিলিয়ে সমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার ২ শতাংশের কিছু বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত দুই দশকে কোভিড-আক্রান্ত বছর ছাড়া এত কম প্রবৃদ্ধি আর কখনোই হয়নি। মহামারির প্রেক্ষাপটে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
এদিকে সংস্থার চেয়ারম্যানের প্রত্যাশা অনুযায়ী, ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হলেও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি দাঁড়াবে ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
এনবিআর সংশ্লিষ্টদের মতে, গত বছর (২০২৪ সাল) জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ধীরগতি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন কমে যাওয়া এবং অর্থবছর শেষে এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলন ও কর্মবিরতি কর্মসূচির কারণে বড় ধরণের এ ঘাটতি হয়েছে।
কারো কারো মতে, জুলাই অভ্যুত্থানের কারণে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও তা এতটা কমে যাওয়ার কথা নয়।
বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয় না।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ-এর মতে, প্রতিবছর বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়, তা বরাবরই উচ্চাভিলাষী।
এদিকে নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে কম প্রবৃদ্ধি হওয়ায় নতুন অর্থবছরে এনবিআর-এর রাজস্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ দাঁড়াতে পারে।