চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘পটিয়া ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পটিয়ায় মহাসড়ক অবরোধ করে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেমেছে সেনাসদস্যরা। অবরোধের কারণে শত, শত যানবাহন মহাসড়কে আটকে আছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
বুধবার (২ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে পটিয়া উপজেলার কাজীরপাড়া বাইপাস এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এ বাইপাস দিয়েই চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক রুটের অধিকাংশ যানবাহন চলাচল করে। অবরোধের কারণে ওই এলাকায় সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে পটিয়া থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদল নেতকর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুরের অপসারণ দাবি করে সংগঠনটি ‘পটিয়া ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সকাল ১০টার দিকে ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে পটিয়া থানা অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিও।
দুপুর ১২টার দিকে তারা থানা ছেড়ে মিছিল নিয়ে বাইপাস এলাকায় গিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন। পটিয়া মডেল মসজিদসংলগ্ন মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় তাদের পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুর রহমানের অপসারণ দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শোনা গেছে।
তাদের অবস্থানের কারণে পটিয়া বাইপাস মোড় থেকে ইন্দ্রপুল কাজীরপাড়া এলাকা পর্যন্ত সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারী ও আটকে থাকা যানবাহনের যাত্রীরা। পটিয়া পৌরসভার সুচক্রদণ্ডী এলাকার বাসিন্দা মুদি দোকানি সমর খাস্তগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘দোকানের মালামাল কেনার জন্য শহরে চাক্তাই যাবার জন্য বের হয়েছিলাম। বাসে আধাঘণ্টা বসে থাকার পর এখন আবার বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।’
এর আগে, মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে ‘ছাত্রলীগ নেতা’ উল্লেখ করে এক যুবককে মারধর করতে করতে থানায় ঢোকার সময় পুলিশ বাধা দেয়, এতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের দাবি, রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি দীপঙ্কর তালুকদারকে আটক করে পুলিশের কাছে দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে অতর্কিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা শুরু করে। এতে তাদের কয়েকজন আহত নেতাকর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
পুলিশের ‘হামলার’ প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে ‘পটিয়া ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এক যুবককে ছাত্রলীগের নেতা উল্লেখ করে মারধর করতে করতে থানা চত্বরে নিয়ে যান। কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার করতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের বক্তব্য, ওই যুবকের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই।
এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে তারা আটক যুবককে নিয়ে থানার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর পুলিশের সঙ্গে তাদের ধ্বস্তাধস্তি ও হাতাহাতি শুরু হয়। পুলিশ নেতাকর্মীদের থানা থেকে বের করে দেয়। পরে অবশ্য ওই ছাত্রলীগ নেতাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।