Thursday 03 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজবাড়ী ওজোপাডিকো
মিটার রিডারের বিরুদ্ধে ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২ জুলাই ২০২৫ ১৯:৩০

রাজবাড়ী ওজোপাডিকোর মিটার রিডারের বিরুদ্ধে ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। ছবি: সারাবাংলা

রাজবাড়ী: রাজবাড়ী ওজোপাডিকোর মিটার রিডার মোক্তার বিশ্বাসের (৪০) বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের প্রায় ১৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে তিনি উধাও হয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা (৪৭ জন) জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন।

জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড চরনারায়নপুর গ্রামের সেলিম রেজা ওরফে সেলিম মাস্টারের ছেলে মো. মোক্তার বিশ্বাস সদর উপজেলার আলীপুর ও শহীদওহাবপুর ইউনিয়নে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ওজোপাডিকোর বিদুৎতের মিটার রিডার হিসেবে হিসেবে কাজ করে আসছেন। অভিযুক্ত মোক্তার বিশ্বাস রাজবাড়ী জেলার ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) এর নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী মিটার রিডার হিসেবে পরিচয় দিয়ে আলীপুর ও শহীদওহাবপুর ইউনিয়নে বিদ্যুৎ বিল তৈরি, গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল সংগ্রহ, বিকাশের মাধ্যমে বিল আদায় এবং নতুন সংযোগের নামে অর্থ গ্রহণ করতেন।

বিজ্ঞাপন

২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই বছরে দু’টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং ‘বিকাশ’-এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সে এখন গা ঢাকা দিয়েছে। এখন বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে ওই সব গ্রাহকদের বকেয়া বিল পরিশোধ করার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তোভোগী গ্রাহকরা বলেন, ১৫ বছর ধরে মোক্তার আমাদের এলাকাতে বিদ্যুৎ বিলের কপি দিয়ে আসছে। সে আমাদের বলে, আমার কাছে যদি আপনারা বিদ্যুৎ বিলের টাকা দেন আমি জমা দিয়ে দিতে পারি। আমরা তাকে বিশ্বাস করে প্রতি মাসে টাকা দিই। মোক্তার বিভিন্ন ব্যাংকের সিল মেরে, সই করে ও সরকারি স্ট্যাম্প মেরে আমাদের বিল পরিশোধের কপি দিতো। সেই ২০২৩ সাল থেকে আমরা তার কাছে এভাবে বিল দিয়ে আসছি। আমরা জানি যে, পর পর দুই মাসের বিল পরিশোধ না করলে নোটিশ দেওয়া হয় এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু আমাদের কিছুই করা হয়নি এতদিন। হঠাৎ ২০২৫ সালে এসে দেখা যায় কারও ২০২৩-২৪ সালের বিলের বকেয়ার নোটিশ দিয়েছে।

১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগীদের আবেদন। ছবি: সারাবাংলা

১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগীদের আবেদন। ছবি: সারাবাংলা

গোয়ালন্দ মোড়ের বাসিন্দা ভুক্তভোগী কোরবান গাজী বলেন, ‘মোক্তার আমাদের এলাকার মিটার রিডার। তাকে আমি বিশ্বাস করে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫-এর জুন পর্যন্ত প্রত্যেক মাসের বিদ্যুৎ বিলের টাকা পরিশোধ করার জন্য দিয়েছি। সে বিলের কাগজের ওপর ব্যাংকের সিল মেরে,স্ট্যাম্প মেরে আমার কাছে নিয়ে এসে বলতো বিল দিয়ে এসেছি। আমরা ব্যাংকের সিল ও স্ট্যাম্প দেখে বুঝতাম বিল পরিশোধ হয়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎ বিদ্যুৎ অফিস আমার ২০২৩ ও ২০২৪ সালের ১৫ মাসের ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা বিল বকেয়া দেখিয়েছে। আমাকে এখন এই টাকা তারা পরিশোধ করতে বলছে। কিন্তু আমি কোনো মাসের বিল বকেয়া রাখিনি। সব মাসের টাকা রিডারম্যান মোক্তারের কাছে দিয়েছি। এই ১৫ মাস বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আমার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি। আমি এখন এত টাকা কিভাবে পরিশোধ করব? মোক্তারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং আমাদের বিলের টাকা মওকুফ করা হোক।’

ভ্যানচালক মো. বাবুল শেখ বলেন, ‘একমাস আগে আমার ৭৫ হাজার ৫৬৩ টাকা বকেয়া বিল এসেছে। পরে আমি বিলের কাগজ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে গেলে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, আমি বিল পরিশোধ করিনি। আমি ভ্যান চালিয়ে প্রত্যেক মাসের বিল প্রতি মাসেই মোক্তারকে পরিশোধ করার জন্য দিয়েছি। কিন্তু আমার বিলে ৭৫ হাজার টাকা বকেয়া দেখিয়েছে বিদ্যুৎ অফিস। ২০২৩ সালের বকেয়া বিল ২০২৫ সালে দিয়েছে। আমি ভ্যান চালিয়ে এখন এই টাকা কিভাবে পরিশোধ করব?

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর ওজোপাডিকো’র নির্বাহী প্রকোশলী মো. মামুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আমরা কয়েকজন গ্রাহকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে কিছুটা সত্যতা পেয়েছি। মিটার রিডার মোক্তার হোসেন এর সঙ্গে জড়িত বলে মনে করছি। তাকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছে। তার নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এমন কাজ সে কীভাবে করেছে তা আমার জানা নেই।’

বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগের কপি চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং থানা থেকে অভিযোগের কপিটি সংগ্রহ করে নিতে বলেন। এ বিষয়ে সদর থানায় যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের অফিসিয়াল প্যাডে লেখা একটি অসম্পূর্ণ লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিদ্যুৎ বিভাগকে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে অভিযোগটি এজাহার আকারে পূর্ণাঙ্গ করে লিখে থানায় জমা দিতে বলা হয়েছে।

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। আমি তাদের সমস্ত কথা শুনেছি। বিদ্যুতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হচ্ছে ওজোপাডিকোর এক্সিয়েন। আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করব এবং তাদের যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার সঙ্গেও কথা বলব। আশা করি, সকলের সহযোগিতায় তাদের সমস্যা সমাধান করতে পারব।’

সারাবাংলা/পিটিএম

১৬ লাখ টাকা অভিযোগ আত্মসাত মিটার রিডার