ভোলা: ভোলার তজুমদ্দিনে চাঁদার দাবিতে স্বামীকে মারধর করে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় উপজেলা শ্রমিক দল ও ছাত্রদলের তিন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভাকে ঘিরে ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যাতে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (জুলাই) দুপুরে ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে মামলার ৫ নম্বর আসামি মো. মানিককে (৩৫) আটক করেছে র্যাব। র্যাবের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এখন পর্যন্ত এ ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও ধর্ষণে অভিযুক্ত শ্রমিক দল নেতা মো. ফরিদ উদ্দিন ও যুবদল কর্মী মো. আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
শ্রমিক দল-ছাত্রদলের তিন নেতা বহিষ্কার
গত ২৯ জুন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর তজুমদ্দিন উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিনকে ৩০ জুন দলীয় পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে উপজেলা শ্রমিক দল। এরপর ১ জুলাই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্তে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তজুমদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রাসেল এবং যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জয়নাল আবেদীন সজিবকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান।
প্রতিবাদ সভায় ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তজুমদ্দিন উপজেলার মোল্লার পুকুরপাড় এলাকায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ২০ থেকে ২৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে চারজনকে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তারা হলেন- তজুমদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব মো. মমিনুল ইসলাম শাকিল, চাঁদপুর ইউনিয়ন দক্ষিণ শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. সাব্বির তালুকদার, ছাত্রদল কর্মী মো. মেহেদী পাটওয়ারি ও মো. শামিম।
তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব মো. মমিনুল ইসলাম শাকিল অভিযোগ করেছেন, সমাবেশের আগেই ধর্ষণ মামলার আসামি মো. ফরিদ, আলাউদ্দিনসহ তাদের আত্মীয়স্বজন ও চাঁদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের উত্তর শাখার সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিনের নির্দেশে ৩০-৪০ জন পাইপ ও লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে তাদের অন্তত ১০-১২ জন আহত হন।
তবে, চাঁদপুর ইউনিয়নের উত্তর শাখার ছাত্রদল সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তারা মানববন্ধন শেষে ফেরার পথে তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব মো. মমিনুল ইসলাম শাকিল, চাঁদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ শাখার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. সাব্বির তালুকদারসহ কয়েকজন তাদের লোকজনের ওপর হামলা করেন। এতে তাদের ১০-১৫ জন আহত হয়ে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এই ঘটনায় নাজিম উদ্দিন নামের একজন থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে তজুমদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মহব্বত খান নিশ্চিত করেছেন।
ফেসবুকে ধর্ষণের মিথ্যা ভিডিও ছড়িয়ে অপপ্রচার
তজুমদ্দিন উপজেলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকেল থেকে একটি সম্পাদিত ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে উলঙ্গ নারী-পুরুষ এবং উত্তেজিত জনতাকে দেখা যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে এটিকে তজুমদ্দিনের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা বলে দাবি করা হয়। প্রাথমিকভাবে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে এই ভিডিও ছড়ানো হয় এবং পরবর্তীতে ভোলার পলাতক বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা তাদের ফেসবুকে এটি শেয়ার করেন।
তবে, পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সতর্ক করে জানানো হয়, একটি এডিটেড ভিডিওকে ভোলা জেলার তজুমদ্দিন থানার ঘটনা বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ভোলা জেলার তজুমদ্দিন থানায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তজুমদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মহব্বাত খান জানান, ধর্ষণ মামলায় এক নারীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদেরকেও গ্রেফতারের জন্য পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
তিনি আরও জানান, ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ সভায় ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে মো. নাজিম উদ্দিন নামে একজন ৬ জনের নামে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে। আরেকটি পক্ষ মৌখিকভাবে জানালেও তারা লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন দুপুরের দিকে তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের মোল্লার পুকুর এলাকায় স্বামীকে রাতভর মারধরের পর স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনকে আসামি করে তজুমদ্দিন থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।