ঢাকা: ২০২৪ সালের ৩ জুলাই। আবারও ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে গর্জে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার শিক্ষার্থী নেমে আসে রাজপথে। তাদের মূল দাবি— সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বাতিল এবং মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা।
এদিন বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের ‘সংশপ্তক’ ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে বের হয় একটি বিক্ষোভ মিছিল। এই মিছিল শাহবাগ ও ক্যাম্পাস ঘুরে শেষ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেইটের সামনে। মিছিল থেকে শিক্ষার্থীরা নিম্নলিখিত দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলো হলো-
২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রেখে কোটা সংস্কার কমিশন গঠন;
অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ছাড়া অন্য কোনোপ্রকার ‘অযৌক্তিক কোটা’ বাতিল;
একই ব্যক্তি একাধিকবার কোটার সুযোগ যেন না পায়;
কোটায় যোগ্য প্রার্থী না থাকলে মেধাভিত্তিতে নিয়োগ;
দুর্নীতিমুক্ত ও নিরপেক্ষ আমলাতন্ত্র নিশ্চিতকরণ।
জাবির শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ, এমপির গাড়ি যেতে বাধা
একইদিন বিকেল সোয়া ৩টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামের গাড়িবহর আটকে দেন তারা। এতে তার সঙ্গীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা হয়। সংসদ সদস্য শেষে বিকল্প রাস্তা দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। দেড় ঘণ্টার এই অবরোধে সড়কের দুই পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। অবশেষে বিকেল ৪টা ৫৩ মিনিটে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।
পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান
পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভে নামে। বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলে এই সড়ক অবরোধ। শান্তিপূর্ণভাবে তারা কর্মসূচি সম্পন্ন করেন।
রেলপথ অবরোধ করেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা এদিন সবচেয়ে সাহসী কর্মসূচি পালন করে। তারা রেলপথ অবরোধ করে। দুপুর ১২টায় মুক্তমঞ্চে প্রতিবাদ সভা করে তারা আবদুল জব্বার মোড়ে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় মিছিল করে। সেখানে বেলা ১টা ২০ থেকে ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত রেলপথ অবরোধ করে রাখে। এতে ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জগামী মহুয়া এক্সপ্রেস এক ঘণ্টার জন্য আটকে থাকে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কও ছিল শিক্ষার্থীদের দখলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেইট এলাকায় বেলা পৌনে ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত চলে সড়ক অবরোধ। তাদের দাবি ছিল- ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখা এবং হাইকোর্টের রায় বাতিল করা। এ সময় তারা ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘কোটাব্যবস্থা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘মেধাবীদের কান্না আর না, আর না!’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
মানুষের চোখ ছিল রাজপথে
৩ জুলাই ২০২৪ ছিল এমন এক দিন, যেদিন শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, সমাজের বহু স্তরের মানুষের চোখ ছিল রাজপথে। বার্তা ছিল স্পষ্ট— কোটাব্যবস্থা শুধু প্রশাসনিক ইস্যু নয়। এটি মেধা, ন্যায্যতা এবং তরুণদের ভবিষ্যতের লড়াই।
প্রশাসনের পদক্ষেপ
ঢাকা ও অন্যান্য শহরে ট্রাফিক পুলিশ বিকল্প রুটের নির্দেশনা দেয়। কোথাও কোথাও স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন। তবে সেদিনের আন্দোলন ছিল তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ ও সংগঠিত।