Wednesday 02 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বৈষম্য বিরোধীদের দাবি মেনে পটিয়া থানার ওসি প্রত্যাহার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ জুলাই ২০২৫ ০০:০৩ | আপডেট: ৩ জুলাই ২০২৫ ০০:১১

পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি মেনে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

বুধবার (২ জুলাই) রাতে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ এ আদেশ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডিআইজি স্যার পটিয়ার ওসিকে প্রত্যাহার করে রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত করার আদেশ দেয়া হয়েছে।’

আগেরদিন মঙ্গলবার রাতে পটিয়া থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদল নেতকর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুরের অপসারণ দাবি করে সংগঠনটি ‘পটিয়া ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে।

বিজ্ঞাপন

কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বুধবার সকাল ১০টার দিকে ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে পটিয়া থানা অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভে যোগ দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিও।

বেলা ১২টার দিকে তারা থানা ছেড়ে মিছিল নিয়ে বাইপাস এলাকায় গিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে পটিয়া বাইপাস মোড় থেকে ইন্দ্রপুল কাজীরপাড়া এলাকা পর্যন্ত সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মহাসড়কে যানজটের মধ্যে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারী ও আটকে থাকা যানবাহনের যাত্রীরা। বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে সেনাসদস্যরা গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন।

এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে খান তালাত মাহমুদ রাফি তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে অপসারণে ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে মহাসড়ক ছেড়ে যান। এরা হলেন- পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর, উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুর রহমান এবং জেলা পুলিশের পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম। তাদের অপসারণ করা না হলে আবারও সড়কে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন রাফি।

এদিকে বুধবার বিকেল তিনটার দিকে ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীতে ডিআইজির কাছে গিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেকদল নেতাকর্মী। তারা ডিআইজিকে কার্যালয়ের বাইরে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলার দাবি জানান। কিন্তু এতে ডিআইজির সম্মতি না পেয়ে তারা ওই কার্যালয়ের পাশে খুলশী থানার সামনে নগরীর জাকির হোসেন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে সড়কের উভয়পাশে যানবাহন আটকে আশপাশের সড়কেও যানজট সৃষ্টি হয়।

সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ তাদের দাবি মেনে তার কার্যালয় থেকে বের হয়ে সড়কে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। আন্দোলনকারীরা পটিয়া থানার ওসি, সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলার এসপির অপসারণ দাবি করেন। ডিআইজি ওসিকে প্রত্যাহারের আশ্বাস দিলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সড়ক ছেড়ে যান আন্দোলনকারীরা।

এর আগে, মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে ‘ছাত্রলীগ নেতা’ উল্লেখ করে এক যুবককে মারধর করতে করতে থানায় ঢোকার সময় পুলিশ বাধা দেয়, এতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের দাবি, নিষিদ্ধ ঘোষিত রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি দীপঙ্কর তালুকদারকে আটক করে পুলিশের কাছে দেয়া হয়। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে অতর্কিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা শুরু করে। এতে তাদের কয়েকজন আহত নেতাকর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ওই যুবককে ছাত্রলীগের নেতা উল্লেখ করে মারধর করতে করতে থানা চত্বরে নিয়ে যান। কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার করতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের বক্তব্য, ওই যুবকের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই।

এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে তারা আটক যুবককে নিয়ে থানার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর পুলিশের সঙ্গে তাদের ধ্বস্তাধস্তি ও হাতাহাতি শুরু হয়। পুলিশ নেতাকর্মীদের থানা থেকে বের করে দেয়। পরে অবশ্য ওই ছাত্রলীগ নেতাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

ওসি প্রত্যাহার টপ নিউজ পটিয়া থানা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর