ঢাকা: পরিবেশ, পানি বায়ু, দুর্ঘটনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মতো যেকোনো ব্যর্থতার ফল দিন শেষে চূড়ান্তভাবে স্বাস্থ্যের ওপর পড়ে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। দেশের স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামোগতসহ সামগ্রিক উন্নয়নে চীনের সঙ্গে করছে। আগামীতের দেশটির সঙ্গে আরও সম্পৃক্ততা বাড়বে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকালে রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরের কনফারেন্স রুমে চীনের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু কম্বাইন্ড কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, বর্তমানের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির জন্য আমরা কাউকে দোষারোপ করছি না। দোষারোপের মাধ্যমে কোন সমস্যার সমাধানও হবে না। কারণ যেভাবেই হোক না কেন আমাদের যেকোনো ধরনের ব্যর্থতার ফল চূড়ান্তভাবে স্বাস্থ্যের ওপর পড়ে। পরিবেশ, পানি বায়ু, দুর্ঘটনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দিনের শেষে এগুলো স্বাস্থ্যের ওপর বোঝার সৃষ্টি করে। স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও চিকিৎসার ওপর চাপ পড়ে। ডেঙ্গুও তার ব্যতিক্রম নয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক বলেন, এই মুহূর্তে চারটা ভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে। সাধারণ রোগ ভেবে অনেকেই বাসায় থাকছেন। দেরিতে হাসপাতালে আসা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জটিল করে দিচ্ছে। তারা যদি দ্রুত পরীক্ষা করে নিত, সেটা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক সহায়ক হত। আমাদের ডিটেকশন কিট যথেষ্ট আছে। যেটুকু গ্যাপ আছে, সেটা আমরা পূরণের চেষ্টা করছি। তারপরও এটা মূলত প্রিভেন্টিভ মেজরের ওপর নির্ভর করে, মানুষের সতর্কতা এবং দ্রুত হাসপাতালে আসা অথবা চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া।
চীনের হাসপাতাল নির্মাণের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, চীন প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চায়। বড় হাসপাতাল করতে গেলে অনেক জমির দরকার পড়ে। হঠাৎ করেই এতো বড় জমির ব্যবস্থা করা কঠিন। আর বিগত সময়ে আমাদের অধিগ্রহণের অভিজ্ঞতাও ভাল নয়। সেই কারণে সরকার চাচ্ছে বিগত সময়ে সরকারের অধিগ্রহণ করা জমিতে হাসপাতাল নির্মাণ করা। বাংলাদেশ চীনের দূতাবাসকে দ্রুত এই বিষয়টি জানিয়ে দেবে। পরবর্তীতে চীন বিনিয়োগকারী হিসেবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ স্বাস্থ্য সহকারী বলেন, ডেঙ্গুর প্রাথমিক ইন্টারভেনশন হচ্ছে ভেক্টর কন্ট্রোল। প্রাইমারি ভেক্টর কন্ট্রোল যখন ফেইল করে, তখন আমরা চোখে দেখতে পারি, হাসপাতালে রোগী আসা ও তাদের মৃত্যু।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে নয় শুধু অধিকাংশ রোগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে, যেই কারণে, যেমন বাতাসের মান খারাপ হলে রেসপারেটরি ইনফেকশন হবে, পানির মান খারাপ হলে গ্যাস্ট্রাইটিস হবে। একইভাবে ভেক্টর কন্ট্রোল ফেইলিউরের কারণে ডেঙ্গু হবে। আমরা এই কারণে ব্যাখ্যা দিচ্ছি, গণমাধ্যম যেন বিষয়গুলোতে যার যে দায় দায়িত্ব সেটা পরিষ্কার করে সবার কাছে। প্রত্যেকে যার যার দায়িত্ব পালন করলে শুধুমাত্র চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের উত্তর দিতে হবে না। ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে।
ডা. সায়েদুর বলেন, যে জায়গাগুলোতে ডেঙ্গুর হটস্পট হচ্ছে, সেখানে আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করছি। আমাদের প্রস্তুতি আছে, কিন্তু ডেঙ্গু যদি বেড়ে যায়, তাহলে হয়তো একটু ডিফিকাল্ট হতে পারে। আমরা যে পরামর্শ দিচ্ছি সেগুলো মেনে চললে ডেঙ্গু সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
অনুষ্ঠানে চীনা দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফয়ারস (সিডিএ) চায়নার পক্ষ থেকে বিশেষ সহকারীর কাছে ১৯ হাজার কম্বাইন্ড কিট হস্তান্তর করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কমনিক্যাবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. হালিমুর রাশিদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চায়না চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা।