চট্টগ্রাম ব্যুরো: পুলিশ বাহিনীতে দৃশ্যমান সংস্কার এবং আওয়ামী লীগ আমলে থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সবাইকে বরখাস্ত করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শীর্ষ নেতা খান তালাত মাহমুদ রাফি। এছাড়া পুলিশের সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতাকর্মীরা।
চট্টগ্রামের পটিয়া থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেল তিনটায় চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরে তিন সংগঠনের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা এসেছে। এতে খান তালাত মাহমুদ রাফি মূল বক্তব্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জুবাইর হাসান চার দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দেন। দাবিগুলো হলো- পটিয়া থানা থেকে সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও বিচার এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারকে (এসপি) অপসারণ করা, পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের নির্দেশনা দেওয়া এবং এখন থেকে যেকোনো থানায় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের চিহ্নিত কাউকে নেওয়া হলে কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই তাকে গ্রেফতার করতে হবে।
এতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, ‘পটিয়ার ওসি আমাদের সহযোদ্ধাদের হামলা করে আহত করেছে। আমরা দাবি জানিয়েছিলাম, সেই ওসিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, প্রশাসন আমাদের সঙ্গে প্রহসন করেছে। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, পটিয়ার ওসিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমাদের যেসকল ভাইয়েরা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার দায়ভার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে।’
‘আমরা জুলাই অভ্যুত্থানে দেখেছি, আমাদের ওপর পুলিশ কীভাবে গুলি চালিয়েছে। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও প্রধান কাজ ছিল এই পুলিশকে দৃশ্যমান সংস্কারের মুখোমুখি করা। যেসব পুলিশ সদস্য জুলাই আন্দোলনে আমাদের গুলি করেছে, যারা আমাদের মায়ের বুক খালি করেছে, তাদের শাস্তির মুখোমুখি করা। কিন্তু আমরা দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে পাইনি। এটা তারা তাদের দায়বদ্ধতা মনে করেনি। আমরা তাদের ধিক্কার জানাই।’
তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র বদলি-বদলি খেলা করে পুলিশ সংস্কার সম্ভব নয়। আমরা দেখেছি, বিগত ১৫ বছরে যারা হাসিনার আমলে ওসি ছিল, তারা হাসিনার পা-চাটা গোলাম ছিল। তাদের বর্তমানে দায়িত্বে থাকার কোনো প্রয়োজন আমরা মনে করি না। বরং তাদের বরখাস্ত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। পুলিশকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আমূল সংস্কারের মুখোমুখি করতে হবে এবং সেটার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।’
‘আমরা বিশ্বাস করি, এদেশে আবারও জুলাই নেমে আসবে, বীর চট্টলা আবারও ঐক্যবদ্ধ হবে। বাংলাদেশ আবারও ঐক্যবদ্ধ হবে। পাঁচ আগস্টের মতো বাংলাদেশের মানুষ আবারও রাজপথে নেমে আসবে। তারা পুলিশের সংস্কার চাইবে, তাদের ভাইদের খুনিদের বিচার চাইবে। যে মা সন্তান হারিয়েছেন, তিনি তার সন্তান হত্যার বিচার চাইবেন।’
পুলিশ সংস্কারের জন্য আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে রাফি বলেন, ‘বীর চট্টলার ক্যান্টনমেন্ট খ্যাত ষোলশহর থেকে পুলিশ সংস্কারের আন্দোলনের ঘোষণা করছি। আমরা বিশ্বাস করি, পুলিশে যারা আছেন, তাদের অনেকেই সংস্কার চান। পুলিশ ভাইদের বলব- আপনারা আমাদের ভাই, আমরা চাই, আপনারাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের সাথে রাজপথে আসবেন। আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে আমাদের সাথে সংহতি জানাবেন। আমরা সবাই মিলে পুলিশ সংস্কার করব এবং জুলাই বিপ্লবের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করব।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ইমন সৈয়দ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন, যুগ্ম সদস্যসচিব ইবনে হোসাইন জিয়াদ, মুখ্য সংগঠক তাওসিফ ইমরোজ।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের এক নেতাকে ধরে পটিয়া থানায় নিয়ে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতকর্মীরা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো মামলায় না থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার না করে হেফাজতে রাখে। বৈষম্যবিরোধীরা তাকে গ্রেফতার দেখানোর দাবিতে থানার ভেতরে হট্টগোল শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ‘পটিয়া ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বুধবার (২ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা পটিয়া থানা অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে তারা পটিয়া বাইপাস এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।
এ ছাড়া, বুধবার বিকেলে ওসি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে নগরীর খুলশীকে ডিআইজি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপি’র আরেকদল নেতাকর্মী। তারা ডিআইজিকে কার্যালয়ের বাইরে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলার দাবি জানান। কিন্তু এতে ডিআইজির সম্মতি না পেয়ে তারা ওই কার্যালয়ের পাশে খুলশী থানার সামনে নগরীর জাকির হোসেন সড়ক প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এ সব ঘটনার পর বুধবার রাতে ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুরকে পটিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের কার্যালয়ে সংযুক্ত রাখার আদেশ দেন ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ।