Thursday 03 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এনসিটি পরিচালনার ভার আপাতত নৌবাহিনীর ড্রাইডকের হাতে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ জুলাই ২০২৫ ২২:৫০

চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল আলোচিত নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার ভার আপাতত নৌবাহিনীর হাতেই যাচ্ছে। তবে সরাসরি নৌবাহিনীকে নয়, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান ড্রাইডকের সঙ্গে এনসিটি পরিচালনার চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত পাবার পর ড্রাইডকের সঙ্গে এনসিটি পরিচালনার চুক্তির বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় অনুমোদন হয়েছে। আগামী ৬ জুলাই ড্রাইডকের সঙ্গে ছয় মাসের জন্য এনসিটি পরিচালনার চুক্তি করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত একটি সামরিক জাহাজ মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দরের সীমানার মধ্যেই এটির অবস্থান।

এনসিটি পরিচালনার ভার বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে নানামুখী বাদ-প্রতিবাদের মধ্যে আপাতত নৌবাহিনীকে এ কাজে যুক্ত করার সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চলছিল।

অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সরাসরি নৌবাহিনীর বদলে তাদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠান এনসিটি অপারেশনের সিদ্ধান্তে পৌঁছাল সরকার। এর মধ্য দিয়ে প্রায় দুই দশক ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে ‘রাজত্ব’ চালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাধর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের কাছ থেকে মুক্ত হচ্ছে এনসিটি।

চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৪টি কনটেইনার টার্মিনাল আছে। এগুলো হলো- চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), জেনারেল কারগো বার্থ (কনটেইনার ও বাল্ক-জিসিবি) এবং পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি)।

এনসিটি চট্টগ্রাম বন্দরে প্রথম নির্মিত ও সবচেয়ে বড় টার্মিনাল, যাতে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ আরও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য একসঙ্গে অন্তত ৭৭ জন আরটিজি অপারেটর, ৩০ জন কিউজিসি অপারেটর, ৩২ জন স্ট্র্যাডাল ক্যারিয়ার অপারেটর, ১২ জন এম্পটি হ্যান্ডলার অপারেটর, ৬ জন হারবার ক্রেন অপারেটর ছাড়াও ১৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেন চালানোর অপারেটর প্রয়োজন হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে হ্যান্ডলিং হওয়া ৩২ লাখ টিইইউস কনটেইনারের মধ্যে ৪৪ শতাংশ এককভাবে পরিচালনা হয়েছে এনসিটি থেকেই।

২০০৭ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ এক হাজার মিটার দৈর্ঘ্যের এ টার্মিনালটি নির্মাণ করে। এরপর বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করে। শুরু থেকেই বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবি ছিল, এনসিটি বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করার। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এনসিটি পরিচালনার ভার তুলে দেয় বেসরকারি সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের হাতে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার রুহুল আমিন তরফদার আওয়ামী লীগের ক্ষমতাধর মন্ত্রী-এমপিদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এর ফলে শুধুমাত্র এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েই তরফদার চট্টগ্রাম বন্দরে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে।

গত ১৫ বছর ধরে দফায় দফায় চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর পর সাইফ পাওয়ারটেকের সময় শেষ হচ্ছে আগামী ৬ জুলাই। এ অবস্থায় গত ১৮ জুন এনসিটি পরিচালনার বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তির মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাইফ পাওয়ারটেকের মেয়াদ শেষের পর এনসিটি পরিচালনার ভার দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার প্রাক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় তারা সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যেতে পারেনি।

এরপর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে এনসিটি পরিচালনার ভার ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে। গত ১৪ মে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে এসে বন্দর ব্যবস্থাপনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদেশি সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করার অভিমত জানান। তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘বন্দর ব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর সেরা যারা তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ রাজি না থাকলে তাদের রাজি করাতে হবে। মানুষকে গররাজি করিয়ে করার দরকার নেই, রাজি করিয়েই করতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের মতামত প্রকাশ্য হওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীরা এর বিরোধিতা শুরু করেন। বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহযোগী শ্রমিক সংগঠনগুলো গত একমাস ধরে বন্দর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে মিছিল-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। বামপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ‘সাম্রাজবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’ ব্যানারে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ করেছে গত ২৭ ও ২৮ জুন।

তবে এত বিরোধিতার মধ্যেও সরকার ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে এনসিটির পরিচালনার ভার দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটুট আছে, এমন ইঙ্গিত মিলেছে সম্প্রতি নৌপরিবহন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেনের কথায়।

সারাবাংলা/আরডি/এইচআই

চট্টগ্রাম বন্দর নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নৌবাহিনী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর