Saturday 05 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুলাইয়ের দিনলিপি
আপিল বিভাগেও কোটার পক্ষে রায়, সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক

ফারহানা নীলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৪ জুলাই ২০২৫ ০৮:১০ | আপডেট: ৪ জুলাই ২০২৫ ১১:৩২

জুলাই গণঅভ্যুত্থান, ৪ জুলাই ২০২৪। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: একদিকে ঝুম বৃষ্টি, অন্যদিকে উত্তাল স্লোগান— ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা!’ এমনই এক বৃহস্পতিবার ছিল ২০২৪ সালের ৪ জুলাই। সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে চলমান আন্দোলনের চতুর্থ দিন নতুন মাত্রা পায় ছাত্র-জনতার প্রতিরোধে।

চার বছরের ব্যবধানে রায়ের পুনরাবৃত্তি। কোটার পক্ষে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। আর এর প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। একদিকে বিচার ব্যবস্থার বাস্তবতা, অন্যদিকে তরুণদের টগবগে চেতনার প্রকাশ।

আদালতের রায়

এই দিনেই ছিল আদালতের সেই সিদ্ধান্ত। সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত ওই বছরের ৫ জুন হাইকোর্ট ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছিল, সেটি আপিল বিভাগও বহাল রাখে।

বিজ্ঞাপন

এই রায়ের ফলে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা কার্যকর থাকে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে। আদালতের এই অবস্থানে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, নির্বাহী বিভাগ কোটা বাতিল করে, আর বিচার বিভাগ আবার চালু করে— এটা রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যেই সমন্বয়হীনতার উদাহরণ।

শাহবাগে অবস্থান তীব্র হয়ে ওঠে

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন শত শত শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তারা মিছিল নিয়ে মাস্টারদা সূর্যসেন হল, মুহসীন হলের গেট, ভিসি চত্বর, রাজু ভাস্কর্য হয়ে অবশেষে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। কথা ছিল, অবস্থান কর্মসূচি হবে। কিন্তু সেটা ধীরে ধীরে রূপ নেয় শক্তিশালী প্রতিরোধে। শাহবাগ মোড় ছয় ঘণ্টা ধরে ছিল অবরুদ্ধ। শিক্ষার্থীরা বসে পড়েন, স্লোগানে উত্তাল হতে থাকে শাহবাগ।

শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ ও ব্যাচ থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তারা। নারী শিক্ষার্থীদেরও অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো।

ছাত্রলীগের বাধা

ছাত্রলীগের কিছু হল শাখা এদিন আন্দোলনে বাধা দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। কোথাও গেট তালাবদ্ধ, কোথাও শিক্ষার্থীদের আটকে রাখা হয় গেস্টরুমে। পরে আন্দোলনকারীরা হলে গিয়ে তালা খুলতে বাধ্য করেন।

বিক্ষোভ ছড়ায় সারাদেশে

৪ জুলাই শুধু শাহবাগে নয়, সারাদেশে আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে পড়ে—

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা রায়সাহেব বাজার মোড় অবরোধ করে
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধ করে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধ করে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভ করে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে
  • খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেয়

নিরাপত্তা, কিন্তু সংঘর্ষ নয়

পুরো দিনজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল সর্বত্র। কোথাও কোথাও বেরিকেডও দেওয়া হয়, তবুও সংঘর্ষ বা বড় ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তা আর সংযমের মধ্য দিয়েই কেটেছে দিনটি।

নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

শিক্ষার্থীদের পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সন্ধ্যায় রাজু ভাস্কর্যে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন পরবর্তী কর্মসূচি-

৫ জুলাই (শুক্রবার): সারাদেশে ছাত্র-জনতার সমন্বয়
৬ জুলাই (শনিবার): বিক্ষোভ মিছিল
৭ জুলাই (রোববার): ছাত্র ধর্মঘট ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

হাইকোর্টের রায়ে কোটাব্যবস্থা বহাল রাখার বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘২০১৮ সালে নির্বাহী বিভাগ পরিপত্রের মাধ্যমে কোটা বাতিল করল। বিচারবিভাগ দিয়ে কোটা আবার পুনর্বহাল করা হলো। এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন। এটা রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে সমন্বয়হীনতার উদাহরণ। নির্বাহী বিভাগ আদেশ দিচ্ছে, আর বিচার বিভাগ বাতিল করছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্তঃদ্বন্দ্বে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক নেই।’

সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম

৪ জুলাই ২০২৪ আপিল বিভাগ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর জুলাই বিপ্লবের এক বছর টপ নিউজ রায় বহাল হাইকোর্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর