চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বাজারে চালের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। অথচ পাইকারি ও খুচরায় চালের দাম বাড়ছে। পাইকারি বাজারে গত এক সপ্তাহে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা বেড়েছে। খুচরায় বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মজুতের কারণে দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের চাল ব্যবসায়ীরা।
এদিকে চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারে কয়েক পদের সবজির দাম কিছুটা বাড়লেও অধিকাংশই গত সপ্তাহের মতো আছে। মাছ-মাংস ও মুদিপণ্যের দামেও তেমন হেরফের হয়নি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) নগরীর কর্ণফুলী ও আসকার দিঘীর পাড় কাঁচাবাজার ঘুরে এবং পাহাড়তলী ও চাক্তাইয়ে চালের বাজারে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানির ঈদের আগে-পরে দুই মাস চালের দাম কমতির দিকে ছিল। কিন্তু জুনের শেষ সপ্তাহে এসে চড়া হতে শুরু করে। এর মধ্যে সরু চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। নগরীর পাহাড়তলী ও চাক্তাই চালের আড়তে কাটারি, জিরাশাইল, নাজিরশাইল ও মিনিকেটসহ প্রায় সব চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৯ টাকা বেড়েছে। আড়তে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৫৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। জিরাশাইল ও মিনিকেট আতপ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকার মধ্যে।
আর খুচরায় সরু চালের মধ্যে ডায়মন্ড, মঞ্জুর, সাগর, রসিদ- এসব ব্র্যান্ডের মিনিটেক চাল প্রতিকেজি ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। ভালো মানের মিনিকেট আতপ মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগে দাম ৮০ টাকা ছিল বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
খুচরায় মাঝারি ও মোটা চালের দামও কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে স্বর্ণা চালের দাম কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের মাঝারি মানের চালের দামও কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫ দিন চালকল ও আড়ত বন্ধ ছিল। ঈদের পরে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। এর মধ্যে আবার উত্তরাঞ্চলে ধানের দামও বেড়েছে। অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান, যারা সরু চাল উৎপাদন করে, তারা বিপুল পরিমাণ মজুত করে রেখেছে। এজন্য চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে সামনে কমে যাবে।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চালের সরবরাহ এবং মজুতের ক্ষেত্রে কোনো সংকট নেই। আমদানিও প্রচুর আছে। এরপরও দাম যেটা বাড়ছে, সেটা হলো সিন্ডিকেটের কারসাজি। সংকট হচ্ছে, এখানে প্রশাসনের গাফেলতি আছে। চালের বাজার কোনো সময়ই তদারকির মধ্যে থাকে না। যখনই এরকম দাম বাড়ে, খুচরা কয়েকটা দোকানে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর বা জেলা প্রশাসন গিয়ে একটু করে জরিমানা করে, তারপরে শেষ। যারা আসলে মূল হোতা পাইকার, আড়তদার, মজুতদার, মিলার ও করপোরেট গ্রুপ, তাদের ব্যাপারে কোনোসময় খোঁজ খবর নেওয়া হয় না। এ কারণে তারা প্রতিনিয়ত দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে বাজারে সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও কয়েক পদের সবজির দাম বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে সব ধরনের আলুর দাম কেজিতে অন্তঃত ৫ টাকা বেড়েছে। মুন্সীগঞ্জের আলু ২৫ টাকা, বগুড়ার লাল আলু ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বরবটি, কাঁকরোল, ঝিঙা, পটল, করলা- এসব সবজি ৬০ টাকার নিচে মিলছে না, দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা। এছাড়া পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা আছে। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা কেজি দরে। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।
গরুর মাংস গত সপ্তাহের মতোই ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকা, খাসি ও পাঁঠা ছাগলের মাংস ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, সাদা ডিম ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, হাঁসের ডিম ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের দর গত সপ্তাহের মতোই আছে। বাজারে আকার, ওজন ও মান অনুযায়ী ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। রুই ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, বেলে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চিংড়ি ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, কাঁচকি ৪০০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, শিং ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, চিতল ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারে মুদি পণ্যের দামেও তেমন হেরফের নেই। কেজিপ্রতি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, দেশি রসুন ১২০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, চায়না আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ১২০ দরে বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া প্রতি কেজি ছোট মসুর ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১০ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৮০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, কাজু বাদাম ১ হাজার ৭০০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২ হাজার ৭০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১ হাজার ২২০ টাকা, কিশমিশ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, দারুচিনি ৫২০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪০০ টাকা, কালো গোলমরিচ ১ হাজার ৩০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা, জিরা ৬০০ টাকা, প্যাকেট পোলাও চাল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মান ভেদে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
আর প্রতি কেজি প্যাকেটজাত সাদা চিনি ১২৫ টাকা, খোলা সাদা চিনি ১২০ টাকা, খোলা লালচিনি ১৪০ টাকা, প্যাকেট লালচিনি ১৭০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ৯০ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২৫০ টাকায় দরে বিক্রি হয়েছে।