সাতক্ষীরা: একজনের বয়স পাঁচ বছর, আরেকজনের ছয়। যে বয়সে ছেলেমেয়েরা খেলাধূলায় ব্যস্ত সে সময়ে তারা রাস্তায় রাস্তায় মায়ের খোঁজে। তিন মাস হলো গর্ভধারিণী মা সন্তানদের ফেলে চলে গেছেন। সেই থেকে মাকে ফিরে পাওয়ার আশায় বাবার সঙ্গে তারা ঘুরছেন আদালতের বারান্দায়।
অবুঝ শিশু তোয়া ও ফুয়াদের মতোই পিতার চোখেও পানি ঝরতে দেখা যায়। তোয়া ও ফুয়াদের পিতা সোহেল রানার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, তিনি ৫০ নম্বর গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি হিসেবে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি জমি বর্গা নিয়ে মাছ চাষ করে থাকেন। লক্ষ্য স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে একটু ভালো থাকা। কিন্তু বিধি বাম। তার স্ত্রী একই গ্রামের রহমান গাজীর ছেলে বিবাহিত রবিউল ইসলামের খপ্পরে পড়ে স্বামী-সন্তান রেখে চলে গেছেন।
এই ঘটনায় সোহেল রানার থেকে বহু গুণ বেশি অসহায় অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে আইভির দুই ছেলে-মেয়ে। তাই অবুঝ শিশু তোয়া ও ফুয়াদ সাতক্ষীরা শহরে এসে রাস্তায় রাস্তায় গলিতে গলিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। দুই শিশুর দাবি, তাদের মা সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
সোহেল রানা জানান, সবকিছুর পরও দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসারের বন্ধন অটুট রাখতে চায়। ছেলে-মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে তৈরি করতে চান। সেজন্য স্ত্রী আইভির ফোনে বহুবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তিনি জানতে পেরেছেন, আইভি তার সংসার থেকে পাওয়া স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান যা নিয়ে গিয়েছে সব রবিউলের হাতে তুলে দিয়েছে।
সোহেল রানার দাবি, রবিউল আত্মগোপনের স্বার্থে আইভির ফোনটি নষ্ট করে দিয়েছে। আইভি গত ১৩ রমজান রবিউলের সঙ্গে যোগাযোগ করে পালিয়ে যায়। ফলে সোহেল রানার সংসার ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে পড়ে। সোহেল রানার কোনো ভাই নেই। আছে এক বোন, তিনি খুলনায় থাকেন শ্বশুর বাড়িতে। সন্তানদের যথাযথ পরিচর্যায় তাই এখন চরম সংকট দেখা দিয়েছে। সংসার হয়ে গিয়েছে ছিন্নভিন্ন। সবকিছুর পরও ছেলে-মেয়ে এবং সোহেল রানা এখনো আশায় আছেন যে, আইভি সংসারে ফিরবে।
সাতক্ষীরা লিগ্যাল এইডের আইনজীবী মুনীর উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের গাবুরা গ্রামের সোহেল রানা ও আনজুয়ারা খাতুন আইভি দম্পতির দুই সন্তান আশুরা সুলতানা তোয়া (৬) ও আবরার ফুয়াদ (৫) প্রখর রৌদ্রের মধ্যে সাতক্ষীরা শহরের রাস্তায় রাস্তায় ও আদালত পাড়ায় ‘মা তুমি কোথায় তোমার কাছে যাব’ এরকম আর্তনাদ করতে করতে ছুটে বেড়াতে দেখা যায়। তারা সাতক্ষীরা জজ আদালতের লিগ্যাল এইডের শরণাপন্ন হয়েছেন।
আইনজীবী আরও জানান, এ ব্যাপারে আদালত অভিযুক্ত রবিউলকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি হাজির হচ্ছেন না।
এদিকে, তোয়া ও ফুয়াদের মা আইভি’র দেখা না মেলায় কঠিন দুশ্চিন্তায় পড়েছে তাদের পরিবার। এমনকি অবুঝ সন্তানরা পোস্টার বানিয়ে দেয়ালে টাঙিয়ে মায়ের দেখা পেতে আকুতি জানিয়েছে।