চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে চা-বাগানের ভেতর এক চা-শ্রমিক এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এক কিশোরীকে খুন করেছে। পুলিশ ওই চা-শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে।
শনিবার (৫ জুলাই) ভোরে ফটিকছড়ি উপজেলার উদালিয়া চা-বাগানের ভেতর এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহত সুপ্তা মাঝি (১৬) উদালিয়া চা-বাগানের শ্রমিক কৃষ্ণ মাঝির মেয়ে। এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া রতন দাস (৩৭) একই চা-বাগানের শ্রমিক।
ভুজপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহবুবুল হক সারাবাংলাকে জানান, নিজ ঘরে রতন বটি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে সুপ্তাকে গুরুতর জখম করে। আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ফটিকছড়ির নাজিরহাটে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার পর চা-বাগানের অন্যান্য শ্রমিকরা মিলে রতনকে আটকে রাখে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাকে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে বলে ওসি জানিয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি জানান, সুপ্তাসহ কৃষ্ণ মাঝির চার মেয়ে ছিল। রতনের এক মেয়ে জন্মের পর মারা যায়। এজন্য রতন ও তার স্ত্রী সুপ্তাকে কৃঞ্চ মাঝির কাছ থেকে নিয়ে তাদের ঘরে রেখে সন্তানের স্নেহে লালন-পালন করেন।
সুপ্তার বাবা-মা ও বাকি তিন বোনও চা-বাগানে কাজ করেন। এজন্য সুপ্তাও চা-বাগানে কাজে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। রতন এবং তার স্ত্রী উভয়েই চা-শ্রমিক। পাশাপাশি রতন সেলাইয়ে পারদর্শী। চা-বাগানের কাজের বাইরে রতন ওই এলাকায় সেলাইয়ের কাজ করেও বাড়তি উপার্জন করতেন।
ওসি মাহবুবুল হক বলেন, ‘হঠাৎ রতন সিদ্ধান্ত নিল, সে চা-বাগানের কাজ ছেড়ে স্ত্রী ও সুপ্তাকে নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে যাবে। সেখানে তিনজন মিলে সেলাইয়ের কাজ করলে আরও বেশি টাকা ইনকাম করতে পারবে বলে তার ধারণা ছিল। এজন্য স্ত্রী ও সুপ্তাকে তার কাছ থেকে সেলাই শেখার জন্য বারবার তাগাদা দিয়ে আসছিল। কিন্তু ওরা দুজন চা-বাগান ছেড়ে শহরে যেতে আগ্রহী ছিলেন না। এজন্য রতন যতবারই তাদের একথা বলতো, তারা বিষয়টি এড়িয়ে যেত, কিংবা সেখান থেকে চলে যেত।’
‘এ নিয়ে রতনের মনে ক্ষোভ ছিল। শনিবার (৫ জুলাই) সকালে রতন বাইরে থেকে ঘরে ফিরলে তার স্ত্রী ও সুপ্তা তাকে দেখে সেখান থেকে চলে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সে সুপ্তাকে আটকে এলোপাতাড়ি কোপায়। ঘটনা দেখে রতনের স্ত্রী দ্রুত অন্যান্য শ্রমিকদের সেখানে ডেকে আনেন। তারা আহত সুপ্তাকে হাসপাতালে পাঠায় আর রতনকে আটক করে।’
এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন ভুজপুরের ওসি।