Monday 07 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণ
খেলাপি ঋণ-সঙ্কটাপন্ন ব্যাংক ও তারল্য সঙ্কটে তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখে আর্থিক খাত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ জুলাই ২০২৫ ১৪:২১ | আপডেট: ৭ জুলাই ২০২৫ ১৫:৩৭

ঢাকা: ক্রমবর্ধমান অনাদায়ী ঋণ (নন-পারফরমিং লোন বা খেলাপি ঋণ), সঙ্কটাপন্ন ব্যাংক ও চলমান তারল্য সঙ্কটের ফলে দেশের আর্থিক খাত বর্তমানে তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কিছু ব্যাংক তাদের অবস্থার উন্নতি করতে পারলেও, বেশ কয়েকটি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কঠোর সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, আইনি পুনরুদ্ধার এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর সম্ভাব্য একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণ সম্পর্কিত ব্যাপক সংস্কার করা না হলে- এই দুর্বলতাগুলো আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

বাজেট ডকুমেন্ট হিসেবে প্রকাশিত ‘মধ্য মেয়াদি সামষ্টিক নীতি বিবৃতি’-তে নতুন অর্থবছরে ৭টি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে এমন পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস ব্যক্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

চিহ্নিত চ্যালেঞ্জগুলোতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির উচ্চ হার নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কঠোর মুদ্রানীতি বাম্তবায়নের পাশাপাশি সহায়ক রাজস্ব নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতির চাপ এখনও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।

তৃতীয়ত: বিদ্যমান কঠোর মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির কারণে, বিশেষ করে উচ্চ নীতি সুদহারের প্রভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারে সুদের হার বাড়ার ফলে, ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতি না কমলে নতুন অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগে ধীরগতি এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) স্থবির হয়ে পড়তে পারে। এর ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধিসহ জিডিপি প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী প্রবণতা তৈরির ঝুঁকি রয়েছে।

চতুর্থত: রাজস্ব-জিডিপি অনুপাতের নিম্নহার দেশে দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। এর ফলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালনে সরকারের সক্ষমতা সীমিত হয়ে থাকে; যা গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন উদ্যোগ এবং সামাজিক খাতে বিনিয়োগসহ দীর্ঘ মেয়াদে প্রবৃদ্ধির চাকাকে বেগবান করার পথে একটি বড় বাধা।

পঞ্চমত: বাংলাদেশের রফতানির ওপর ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ, যা সাময়িকভাবে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে, এটি দেশের রফতানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
অন্যদিকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক (এপ্রিল, ২০২৫)-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির হার কমে ২ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এটি বাংলাদেশি পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা আরও কমিয়ে দিতে পারে। এ প্রেক্ষিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রফতানিতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

ষষ্ঠত: ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা হারানো, রফতানি প্রতিযোগিতা বজায় রাখা এবং বৃহত্তর অর্থনৈতিক বৈচিত্র অর্জন। পাশাপাশি সহজ শর্তের ঋণ বা জলবায়ু সংক্রান্ত তহবিল থেকে ঋণ গ্রহণের সুযোগ কমে আসার যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়াটাও একটা চ্যালেঞ্জ, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে।

সপ্তমত: ‘ওয়ার্ল্ড রিস্ক ইনডেক্স ২০২৪’ অনুসারে, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের উচ্চ ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী নবম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।
‘ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২৫’-এর মতে, সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর কারণে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয় এবং এর ফলে প্রতি বছর ৬৩ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অর্থ বিভাগ বলছে, এই দুর্যোগগুলো যেহেতু পুনরাবৃত্তিমূলক, তাই সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি কমিয়ে আনা এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য ব্যাপক মূল্যায়ন ও কার্যকর কৌশল গ্রহণ অপরিহার্য।

সারাবাংলা/আরএস

অর্থ বিভাগ আর্থিক খাত চ্যালেঞ্জ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর