ঢাকা: জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের রাজাকার বলেননি শেখ হাসিনা, এটি অপব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
সোমবার (৭ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। এদিন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল।
এদিন এ মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতে শুনানি করেন স্টেট ডিফেন্সের এই আইনজীবী। আদালতকে তিনি বলেন, ‘গত বছরের ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ বক্তব্যটি অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া আসামিরা নির্দোষ। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অতএব মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার তাদের হক রয়েছে।’
প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১০ জুলাই দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে, ১ জুলাই এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। ওই দিন আদালতে প্রসিকিশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তবে সময় চেয়ে আবেদন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
ওই দিন আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়েই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। পরিমাণে, সংখ্যায় ও স্থানের ব্যপকতায় এ অপরাধ ছিল বিস্তৃত-ব্যাপক। অপরাধ ছিল সিস্টেমেটিক বা পদ্ধতিগত।’
ট্রাইব্যুনালকে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এসব সংঘটিত হয়েছে। তার নির্দেশের চেইন অব কমান্ড অনুসারে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব জায়গায় একই পদ্ধতিতে অপরাধ সংঘটন করেছে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী। এছাড়া সারাদেশে একই পদ্ধতিতে প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং এসব অপরাধ মানবতাবিরোধী বলে প্রমাণ করে। ফলে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের মুখোমুখি করার আর্জি জানান তিনি।’
এর আগে, ২৪ জুন এ মামলায় পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে আইনজীবী নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। গত ১৬ জুন এ মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১ জুন শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় বর্তমানে গ্রেফতার রয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এখনও পলাতক রয়েছেন।
এই তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন।
গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই শেষে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জমা দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।