ঢাকা: আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সীমানা সংক্রান্ত আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করে গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)।
সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। বিকেল তিনটার দিকে এনডিএম এর পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ বৈঠকে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস, নির্বাচনি আচরণবিধি, প্রার্থীর অযোগ্যতা ও নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিসহ চারটি প্রস্তাব তুলে ধরে এনডিএম নেতারা।
এ সময় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বড় পদভুক্ত নেতা, জেলা কমিটিসহ দলের সদস্যরা যেন আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র বা অন্য দলের হয়ে অংশগ্রহণ করতে না পারে- এমন বিধান যুক্ত করতে নির্বাচন কমিশনে দাবিও জানিয়েছে দলটি।
ববি হাজ্জাজ জানান, আরপিও এর প্রার্থীর অযোগ্যতায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাদের যেকোনোভাবে লুকিয়ে ভোটে অংশগ্রহণ না করার বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব তুলে ধরার পরামর্শ দেন সিইসি।
এক প্রশ্নের জবাবে এনডিএম চেয়ারম্যান বলেন, ‘অন্তরবর্তীকালীন সরকার যদি আইন
পাশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে তাহলে আইনের ‘লেটার অব দ্য ল’ মেইনটেইন হতে হবে। নিবন্ধন স্থগিত, যতক্ষণ পর্যন্ত স্থগিতাদেশ না উঠানো হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে না।’
এ সময় তিনি জানান, নির্বাচনি ব্যয়সীমা ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ লাখ টাকা করার জন্য সিইসির কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে পোস্টার থাকছে না, বিলবোর্ড ও ব্যানারের মতো বিষয়গুলো যুক্ত হওয়াতে নির্বাচনি ব্যয় বাড়বে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে এনডিএম চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিলবোর্ড যদি প্রার্থীকে ভাড়া করতে হয় তাহলে ৪০ লাখ টাকা নির্বাচনে ব্যয় দিয়ে সম্ভব হবে না। এটাই বাস্তব। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা আবেদন জানিয়েছি যাতে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে প্রার্থীদের বিলবোর্ডের ব্যবস্থা করেন।’
এনডিএম যে চার দাবি জানিয়েছে, সেগুলো হলো:
সংসদীয় আসন পুনবিন্যাস:
বিদ্যমান আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী সংসদীয় আসন পুনবিন্যাস সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সুতরাং আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।
আসন পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে জেলার মোট আসন অপরিবর্তিত রাখতে হবে। এক জেলায় অবস্থিত সংসদীয় আসন অন্য জেলায় স্থানান্তর করা যাবে না। যেখানে সম্ভব উপজেলাকে অবিভাজিত রাখতে হবে। আসন পুনবিন্যাসের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা, বিভিন্ন আসনের মধ্যে ভোটার সংখ্যার তারতম্য, ভৌগলিক সীমারেখা এবং যাতায়ত ব্যবস্থা, জনপ্রত্যাশা ইত্যাদি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে।
নির্বাচনি আচরণবিধি:
নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় সংসদীয় আসনের নিদিষ্ট স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর ছবি সংবলিত বিলবোর্ড স্থাপন করতে হবে। প্রস্তাবিত পিভিসি ব্যানার ব্যবহার না করা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কোন প্রার্থীর ব্যক্তিগত চরিত্র হনন এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কোনো প্রচারণা চালাতে পারবে না মর্মে আচরণবিধিতে উল্লেখ করতে হবে। নির্বাচনি ব্যয়সীমা ৪০ লাখ টাকায় উন্নীত করতে হবে।
প্রার্থীর অযোগ্যতা:
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যক্তিগত ঋণের জামিনদারদের ক্ষেত্রে ঋণের মূল আবেদনকারী খেলাপি হলে মনোনয়নপত্র দাখিলের পূর্বে ঋণ পরিশোধ স্লিপ প্রদান সাপেক্ষে প্রার্থীকে নির্বাচনের যোগ্য বিবেচিত করতে হবে। (বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টের পরিবর্তে) সরকারের নির্বাহী আদেশে কার্যক্রম বা নিবন্ধন স্থগিত থাকা রাজনৈতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয়/জেলা/ উপজেলা পর্যায়ের কমিটির সদস্য এবং অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির কোন সদস্যকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি:
আগামী ফেব্রুয়ারি-২০২৬ এর প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ধরে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সংলাপ আয়োজন করতে হবে।