কক্সবাজার: যে বয়সে শিশুরা হাঁটা, হাসি আর পৃথিবীর রঙ চেনা শুরু করে, সেই বয়সেই ক্যান্সারের করাল গ্রাসে দুই চোখের আলো হারিয়েছে ছোট্ট শিশু মো. লোকমান হাকিম। এখন তার পৃথিবী শুধুই অন্ধকার।
২০২২ সালের ১৬ আগস্ট কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনার আশরাফ উদ্দীন হায়দার ও রুনা আক্তারের ঘর আলো করে এসেছিল মো. লোকমান হাকিম। ফুটফুটে এই শিশুটিকে দেখে স্বাভাবিক মনে হলেও, সে অন্য দশজন শিশুর মতো দেখতে পায় না। তার দুই চোখের পেছনে জন্ম নেওয়া রেটিনোব্লাস্টোমা নামে টিউমারটি ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়ে কেড়ে নিয়েছে তার দৃষ্টিশক্তি। যে বয়সে তার চারপাশটা আলোয় ভরে থাকার কথা, সেই বয়সেই লোকমানের পৃথিবী ঢেকে গেছে অন্ধকারে।
শিশু লোকমানের পরিবার যখন বুঝতে পারল, ততক্ষণে তার কোমল শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। জন্মের এক বছর পর প্রথমে তার ডান চোখ এবং পরবর্তীতে বাম চোখ অন্ধ হয়ে যায়। আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও অর্থের অভাবে লোকমানের চিকিৎসা শুরু করা যায়নি। মাত্র এক মাস আগে শুরু হয় তার চিকিৎসা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে; ক্যান্সারের শেকড় তার মাথার চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লোকমানের শরীরে প্রথম ধাপের কেমোথেরাপি চলছে।

ছোট্ট শিশু মো. লোকমান হাকিম
লোকমানের মা গৃহিণী রুনা আক্তার, এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তার সন্তানের শরীরে এমন ভয়ংকর রোগ বাসা বেঁধেছে। তিনি সন্তান হারানোর কথা ভাবতেও পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে লোকমানের ডান চোখের মণি সাদা হয়ে যায়, পরে লাল আকার ধারণ করে। ওর যখন যন্ত্রণা হয়, তখন মাথা নিচের দিকে দিয়ে পড়ে থাকে আর কান্না করে। সন্তানের এই কষ্ট একজন মা হিসেবে আর সহ্য করতে পারছি না।’
লোকমানের মা জানান, তার স্বামী একজন অফিস সহকারী, যার সামান্য আয়ে তাদের সংসার চালানোই কঠিন। এমন অবস্থায় ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লোকমানের প্রথম ধাপের কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে। সন্তানের জীবন বাঁচাতে এই অসহায় মা সমাজের বিত্তবান ও হৃদয়বান মানুষের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানকে বাঁচানোর জন্য আপনার একটু সহযোগিতার হাত বাড়ান। আমার বুকের মানিককে আমি হারাতে চাই না।’
সন্তানের এমন কষ্ট দেখে দরিদ্র বাবা আশরাফ উদ্দীন আর সহ্য করতে পারছেন না। মাত্র সাত মাস আগে ক্যান্সারে তার মা, নূর নাহার বেগমকে হারিয়েছেন। সেই শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই প্রিয় সন্তানের এমন অবস্থায় তিনি আরও ভেঙে পড়েছেন।
সামান্য বেতনে চাকরি করা আশরাফ জানান, ‘একদিকে পরিবারের খরচ, অন্যদিকে সন্তানের চিকিৎসা—সব মিলিয়ে এ যেন পাহাড়সমান কষ্ট।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘চিকিৎসকরা কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছেন। তারা বলেছেন, ব্যয়বহুল হলেও চিকিৎসা চালিয়ে গেলে শিশু মো. লোকমান আবারও সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।’’
তাই এই অসহায় বাবা ছেলেকে বাঁচাতে আকুতি জানিয়েছেন। চাইছেন সাবার সাহায্য।
লোকমানের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য: ০১৮৬৭৯৬৪৭৯৫