ঢাকা: ’৯১, ’৯৬ ও ২০০১-এর মতো আগামীতেও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পুলিশ, প্রশাসনসহ সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, সে সময় যদি আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারি, এখন কেন পারব না। এখনও পারতে হবে। হারানো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের এটাই সুযোগ।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক এক্সেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় অন্য চার নির্বাচন কমিশনারও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আরএফইডি’র সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীন (জেবেল)। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আলাপের সময় দেখি উনি সব জানেন ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপি’র সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সবকিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিকভাবে পৌঁছাচ্ছে। এজন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের বার্তা হবে: ভোট দিন, নাগরিক দায়িত্ব পালন করুন। এ দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করেছি, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটাই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।’
নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ইলেকশনের তারিখ নিয়ে সকালে একবার বলেছি। ইলেকশনের তারিখ তো আমিও জানি না। ভোটের দুই মাস আগে একদম ডিটেইলস জানায়ে দিব কোন দিন ভোট হবে, কোন দিন নমিনেশন হবে। সুতরাং, একটু ধৈর্য ধরেন। প্লিজ ওয়েট অ্যান্ড সি এবং যথাসময়ে আপনারা জানতে পারবেন আর আমাদের প্রস্তুতির বিষয়ে।’
তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস আপনারা অন্যরকমভাবে নিয়েন না। আমরা একসময় সরকারি চাকরি করেছি তো। আপনাদের কোনো সাংবাদিককে যদি আরএফডি’র কোনো সদস্যকে কেউ যদি সমালোচনা করে অ্যাজ অ্যা কমিউনিটি আপনাদের একটু খারাপ লাগবে। আমরা যতই দোষ দিই না কেন, আমি যেহেতু সরকারি চাকরি করেছি, যখন মানুষ সমালোচনা করে যে, রাতে ভোট করেছে এবং জালিয়াতি করেছে এই রকম বলে, আমি খুব মনে কষ্ট পাই। এই অপবাদ সবাইকে নিতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এই অপবাদটা কেন সবাইকে নিতে হচ্ছে? কাজেই আমি আপনাদের মাধ্যমে আমার সহকর্মী সেটা প্রশাসন হোক, পুলিশের হোক, কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হোক, যারা পোলিং, প্রিজাইডিং থাকবেন, তাদের কাছে আমার একটা আবেদন থাকবে। আপনাদের মাধ্যমে সে আবেদনটা- আমরা সবাই মিলে কিন্তু ৯১ সালে একটা অত্যন্ত সুষ্ঠ নির্বাচন উপহার দিয়েছি, ৯৬ সালে দিয়েছি, ২০০১ দিয়েছি। এখন কেন পারব না? আমাদের পারতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রশাসনের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছে। এদের ভাবমূর্তি সিরিয়াসলি অ্যাফেক্টেড হয়েছে। পুলিশের ভাবমূর্তি সিরিয়াসলি অ্যাফেক্টেড হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি সিরিয়াসলি অ্যাফেক্টেড হয়েছে। এই ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য এটাই হচ্ছে সুযোগ। আমি আমার কলিগরা আমার সহকর্মীরা যারা এই ইলেকশনের সঙ্গে জড়িত থাকবেন, তাদের কাছে করজোরে আবেদন জানাব, আপনারা মানুষের শ্রদ্ধা অর্জনের চেষ্টা করুন। যে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে, সেটা থেকে আপনারা ওঠে আসুন। আমরা প্রমাণ করতে চাই যে, আমরা পারি, সরকারি কর্মচারীরা পারে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পারে, যদি তারা সত্যিকার অর্থে আন্তরিক হয়।’
সিইসি এ সময় গণমাধ্যমে ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন কমিশনের যত কাজকর্ম হচ্ছে, যত মেসেজ আমরা জাতিকে দিতে চাচ্ছি, আপনারাই তো মাধ্যম। এটা আপনাদের মাধ্যমেই দিচ্ছি। না হলে তো আমাদের এক হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট নিতে হতো। লোকজন এঙ্গেজ করে মেসেজটা পৌঁছে দিতে হতো ১৮ কোটি মানুষের কাছে। আপনাদের মাধ্যমে এক প্রকার বিনা পয়সায় প্রচার আমরা করতে পারছি।’ তবে ভিউ বাড়ানোর জন্য নেতিবাচক হেডলাইন না করারও অনুরোধ জানান তিনি।