Tuesday 08 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাসপাতাল সড়কের বেহাল দশা
দুর্ঘটনা এড়াতে বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৮ জুলাই ২০২৫ ২৩:২৬

দুর্ঘটনা এড়াতে হাসপাতাল সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী। ছবি: সারাবাংলা

রাজবাড়ী: রাজবাড়ী পৌরসভার জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর মধ্যে হাসপাতাল সড়কটি অন্যতম। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার লোক যাতায়াত করে। এটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় বেহাল অবস্থায় হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পৌরসভার এই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কের মধ্যে উল্টে যাচ্ছে রিকশা, ভ্যানসহ ইজিবাইক। আহত হচ্ছেন পথচারীসহ যানবাহনের যাত্রীরা। তাই বাধ্য হয়ে বাশ, কাঁঠ ও গাছের ডালপালা দিয়ে সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার (৮জুলাই) দুপুরে পৌর শহরের হাসপাতাল রোডের কাজীকান্দা সেগুনবাগিচা এলাকায় গিয়ে এ চিত্র দেখা গিছে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ী শহরের পাবলিক হেলথ থেকে ২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত পুরো সড়কটাই বেহাল অবস্থা এবং খানাখন্দে ভরা। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এই সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি অটোরিকশা উলটে গিয়ে ঘটেছে দুর্ঘটনা। তাই বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী বাঁশ, কাঠ ও গাছের ডালপালা দিয়ে সড়কটি আটকে দিয়েছে। এ ছাড়াও, লাল কাপড় দিয়ে বিপজ্জনক নিশানা দিয়েছে।

জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে তিনটি মসজিদ, সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল, রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল, সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট, সিভিল সার্জন অফিস, জেলা মৎস্য অফিস, অসংখ্য বেসরকারি ও প্রাইভেট ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বিএডিসি সেচ অফিস, সারের গোডাউন, বিদুৎ অফিস, জেলা আনসার ভিডিপির কার্যালয়সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

জানা গেছে, রাজবাড়ীর সজ্জনকান্দা এলাকার পাবলিক হেলথ মোড় থেকে হাসপাতাল রোড হয়ে দুই নম্বর রেলগেট পর্যন্ত সড়কটি ১ হাজার ৬৭৫ মিটার। এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে গর্ত। সড়কের পাশের ড্রেনও সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন। ফলে ময়লা আবর্জনায় ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

রাজবাড়ীর প্রধান সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন বা মাল বোঝাই ট্রাক চলাচল করতে না দেওয়ায় এই হাসপাতাল রোড দিয়ে ট্রাকগুলো চলাচল করে থাকে। ফলে কয়েক বছর ধরে সড়কটির বিভিন্ন জায়গা খানাখন্দ হয়ে বেহাল অবস্থায় রয়েছে।

দুর্ঘটনা এড়াতে হাসপাতাল সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী। ছবি: সারাবাংলা

দুর্ঘটনা এড়াতে হাসপাতাল সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী। ছবি: সারাবাংলা

এ ছাড়াও, রাজবাড়ী রেলগেট থেকে নূরপুর পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ অটেরিকশা, রিকশা, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে চলাচল করে থাকে। এর বাইরে ড্রাইস ফ্যাক্টরি রোড, গোদারবাজার রোড, টেকনিক্যাল থেকে শ্রিপুর বাজার রোড, দক্ষিণ ভবানীপুর রোড, ধুঞ্চি রোড সহ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি সড়কেরই বেহাল দশা।

রাজবাড়ী পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল রোড, এতিমখানা রোডসহ আরও কয়েকটি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সদর হাসপাতাল রোড ১৬৭৫ মিটার, পান্না চত্বর থেকে তালতলা পর্যন্ত ২১২০ মিটার এবং ২নম্বর রেলগেট থেকে এতিমখানা রোড সংস্কারের জন্য ওয়ান ব্যাংকের প্রকল্পে উপস্থাপন করা হয়েছে। যার প্রাক্কলিত ব্যায় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এই প্রকল্পটি চলতি মাসের মধ্যে অনুমোদন হয়ে টেন্ডার আহ্বান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিক সারাবাংলার এই প্রতিবেদকে বলেন, ‘রাস্তার পাশে পানির লাইন লিকেজ ও ড্রেন থেকে পানি বের হওয়ার কারণে রাস্তাটিতে সবসময় পানি থাকে। এ ছাড়া, এই সড়ক দিয়ে বড় বড় ট্রাক যাওয়ার কারণে রাস্তাটি ভেঙে গেছে। প্রতিবছর টুকটাক সংস্কার করা হলেও এবার কিছুই করা হয়নি। গতকাল এখানে একটি ইজিবাইক উল্টে যায়। পরে দুর্ঘটনা এড়াতে এলাকাবাসী রাস্তাটি ব্লক করে দিয়েছে। আমরা দ্রুতই এই রাস্তাটির সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।’

অটোচালক রহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি অটো চালাই। কোন রোগিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে এই সড়ক দিয়ে যাওয়া যায় না। অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। আমরা চাই সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা হোক।’

সেগুনবাগিচার স্থানীয় বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক আহমেদ আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতাল সড়কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়ক দিয়ে মালবাহী ট্রাক, বালুর ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে থাকে। এমন বেহাল অবস্থায় রোগী যেতে কষ্ট হয়। এখানে মাঝেমধ্যেই গাড়ি উলটে যায়। এখানে সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়া দরকার।’

রাজবাড়ী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল আজিজ খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে পৌর এলাকায় কয়েকটি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে হাসপাতাল রোডটা অন্যতম। হাসপাতাল রোড, এতিমখানা রোড ও পান্নাচত্বর থেকে তালতলা রোড এই তিনটি রোডের সমন্বয়ে একটি আরইউটিডিপি প্রকল্প থেকে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই সপ্তাহের মধ্যেই অনুমোদন হয়ে যাবে প্রকল্পটি। প্রকল্পের অনুমোদন হলেই এই মাসের মধ্যেই টেন্ডার আহ্বান করব আমরা।’

সারাবাংলা/পিটিএম

টপ নিউজ দুর্ঘটনা বন্‌ধ হাসপাতাল সড়ক