ফেনী: ফেনীতে টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে জেলার ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পরশুরাম উপজেলা। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো মানুষ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকা এবং বাঁধগুলো মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।
হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যেতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। প্লাবিত গ্রামগুলোর অন্তত অর্ধশতাধিক পরিবারের ১৩৩ জন ইতোমধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি সহায়তা পৌঁছে দিতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রয়োজনে আরও আশ্রয়কেন্দ্র খুলে প্লাবিত মানুষদের সেখানে সরিয়ে নেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাঁধ ভাঙনের স্থানগুলো চিহ্নিত করে মেরামতের চেষ্টা চলছে। তবে টানা বর্ষণে কাজ ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে সর্বোচ্চ ফেনীতে ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়, যা চলতি বর্ষা মৌসুমের সর্ব্বোচ রেকর্ড।
পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম উপজেলার জঙ্গলঘোনায় দুটি, অলকায় তিনটি, শালধর এলাকায় একটি, ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকায় একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সিলোনিয়া নদীর পরশুরামের গদানগর এলাকায় একটি ও ফুলগাজীর দেড়পড়া এলাকার দুটি স্থানে ভেঙেছে। এছাড়া কহুয়া নদীর পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়ায় দুটি, বেড়াবাড়িয়ায় একটি ও ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি স্থানে ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। এতে হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান জানান, মাঠপর্যায়ে থেকে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনের ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
এদিকে ফেনীর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ ও ফেনীর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্যমতে, শহরে ও পরশুরাম এবং ফুলগাজীর অনেক বাসা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক মিটার এবং সাবস্টেশন পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে এর পরিধি বাড়তে পারে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, জেলায় টানা তিনদিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার (৯ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার তুলনায় বৃষ্টিপাত কমেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবারও (১০ জুলাই) জেলাজুড়ে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।