Wednesday 09 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আছে মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি
একীভূতকরণে চিহ্নিত পাঁচ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৭৩ হাজার ৪২২ কোটি টাকা

সোহেল রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৯ জুলাই ২০২৫ ১৮:১৪ | আপডেট: ৯ জুলাই ২০২৫ ২০:০৯

ঢাকা: একীভূতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক চিহ্নিত শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৩ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। এটি ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের প্রায় সাড়ে ১৭ শতাংশ। এছাড়া খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৩টি ব্যাংকে ৪০ হাজার ১০৫ কোটি টাকা নিরাপত্তা সঞ্চিতি তথা প্রভিশন ঘাটতি এবং ৪টি ব্যাংকে ৪৪ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিও রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, একীভূতকরণের উদ্দেশে চিহ্নিত শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক হচ্ছে- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। আগামী অক্টোবর নাগাদ এ পাঁচ ব্যাংকের সমস্বয়ে গঠিত হবে বড় আকারের একটি শরীয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক।

বিজ্ঞাপন

সূত্র মতে, চলতি পঞ্জিকা বছরের গত মার্চ শেষে আলোচ্য পাঁচ ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৪২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংকে। গত মার্চ শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের হার মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। অবশিষ্ট ব্যাংকগুলোর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা (খেলাপি ঋণের হার ৩৬.৬৩ শতাংশ); সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ১৪ হাজার ৩৫৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা (খেলাপি ঋণের হার ৩৭.৫৮ শতাংশ); গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৭ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা (খেলাপি ঋণের হার ৫৪.৩৬ শতাংশ) এবং এক্সিম ব্যাংকে ৩ হাজার ১৭১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা (৬ শতাংশ) খেলাপি ঋণ রয়েছে।

একই সময়ে (মার্চ ২০২৫) খেলাপি ঋণের বিপরীতে চিহ্নিত পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে তিনটিতে মোট প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ১০৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ১৫ হাজার ২৭০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা; ইউনিয়ন ব্যাংকে ১৪ হাজার ২৬৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ১০ হাজার ৫৭০ কোটি ৭০ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।

প্রসঙ্গত: বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধান অনুযায়ী, সাধারণ ক্যাটাগরির ঋণের বিপরীতে ০.৫ থেকে ৫ শতাংশ, নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ এবং সন্দেহজনক খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয় ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া প্রতিটি মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখা বাধ্যতামূলক।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রভিশন ঘাটতির চাপ ব্যাংকগুলোতে তরল অর্থের ঘাটতি তৈরি করছে। এতে করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া এবং নতুন ঋণ প্রদানের সক্ষমতা- দুই দিকেই প্রভাব পড়ছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ব্যাংকগুলোতে বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতিও রয়েছে। গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে চারটি ব্যাংকে মোট মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৪ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকে ১৫ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা; ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ১৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা; সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ১১ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ২ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাংককে তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বা ৫০০ কোটি টাকা (এর মধ্যে যেটি বেশি) মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। কোনো ব্যাংক এ শর্ত মানতে ব্যর্থ হলে, সেটি মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে বলে গণ্য হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চিহ্নিত ব্যাংকগুলো একীভূত হলেও ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের অর্থ সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে। একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ব্যাংকগুলোর হিসাবধারীরা আগের মতোই তাদের নিজ নিজ হিসাব চালিয়ে যেতে পারবেন। ব্যাংকগুলোর স্পন্সর পরিচালক, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিতে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

অন্যদিকে ব্যাংকগুলো একীভূত হলেও ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের অর্থ সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে। একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ব্যাংকগুলোর হিসাবধারীরা আগের মতোই তাদের নিজ নিজ হিসাব চালিয়ে যেতে পারবেন বলে সূত্র জানায়।

সারাবাংলা/আরএস

একীভূতকরণে চিহ্নিত পাঁচ ব্যাংক খেলাপি ঋণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর