ঐতিহ্য রক্ষার সংগ্রামে চাই ঐক্য: গোলটেবিলে বক্তারা
২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৬:৩৬
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
কেবল ঢাকা শহরই নয় এখন গ্রামাঞ্চলের ঐহিত্যবাহী স্থাপনাও পেশীশক্তি আর অর্থলোভীদের কারণে ধংসের মুখে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব দুর্বৃত্তরা বরাবরই দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে টাকার পাহাড় গড়েছে। স্বাধীনতাপরবর্তী কোনো সরকারই এদের দমাতে পারেনি। এদের হাত থেকে বাংলাদেশের ঐতিহ্য রক্ষা করতে হলে সংগ্রামের বিকল্প নাই। আর সেই সংগ্রামে সরকার এবং নাগরিক সমাজের ঐক্য বড় প্রয়োজন।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শনিবার ‘স্বাধীনতা, ঐতিহ্য ও স্থাপত্য’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ স্থাপত্য ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্লানার্স ও বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী আয়োজিত ওই গোলটেবিলে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এমিরেটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
স্থপতি কাজী এম আরিফের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে গোলটেবিলে বৈঠকে আলোচনা করেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, শিল্পী হাশেম খান, সাংবাদিক কামাল লোহানী, পরিবেশবিদ আবু নাসের খান, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, শিল্পী আবুল বারক আলভী।
বৈঠকে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী অনেক স্থাপনা ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশিষ্টগুলো এখনই সংরক্ষণ করা না গেলে এ নগরী তার ঐতিহাসিক মূল্য হারাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেবল স্থাপনাই নয় এর আশপাশের এলাকা যদি তা সংশ্লিষ্ট স্থাপনার জন্য প্রয়োজন হয় তবে সেগুলোরও সংরক্ষণ জরুরি। পাশাপাশি এ কাজ করতে গিয়ে যদি কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদেরও ক্ষতিপূরণ কিংবা পুনর্বাসন করতে হবে। সেই সঙ্গে তৃণমূলে জনগণের মধ্যে ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’
দিন দিন যেভাবে দেশের দর্শনীয় স্থাপনাগুলো ধ্বংস হচ্ছে তাতে আগামী প্রজন্মের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে জামিলুর রেজা বলেন, ‘কোনো জাতি কীভাবে বিকশিত হলো ঐহিত্যগত স্থাপনা তার প্রমাণ। এগুলোর সংরক্ষণ করা না হলে বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের বিকাশের বিষয়ে ধোঁয়াশা থেকে যাবে।’
শিল্পী হাশেম খান বলেন, “ঐতিহ্য রক্ষার জন্য একটি জাতিকে প্রথমে শিক্ষিত হতে হয়। সেই শিক্ষা জিপিএ-৫ এর শিক্ষা নয়। এটি মানবিক শিক্ষা, শৈল্পিক শিক্ষা, মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষা। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে ‘অমানবিক’ আখ্যা দিয়ে তিনি এ শিক্ষা ব্যবস্থা এখনই বন্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন।”
শিল্পী হাশেম খান বলেন, ‘দেশে সচেতন মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমছে। তার মানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষকে সচেতন করতে পারছে না। এ শিক্ষা নতুনপ্রজন্মকে আত্মকেন্দ্রিক আর অর্থলোভী করে তুলছে।‘
প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেন, ‘বিভিন্ন সময় সরকারের এসব সেক্টরে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কত বেশি। আপনি একটি সৃষ্টিশীল কাজ করতে চাইবেন আমলাদের সহযোগিতা পাবেন না। উল্টো তারা আপনার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।’
ঢাকা শহর একটি ঐতিহ্যের শহর অথচ এই শহরে কোনো মুক্ত মঞ্চ নেই— এমন আক্ষেপ প্রকাশ করে বর্ষীয়ান এ সাংবাদিক বলেন, ‘এত মানুষের শহরে একটি সর্বজনীন মঞ্চ নেই, এটা ভাবা যায়! অথচ কতদিন ধরে আমরা এ নিয়ে বলে আসছি।’
সারাবাংলা/এমএস/আইজেকে