Thursday 10 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইনভঙ্গে বেপরোয়া সিগারেট কোম্পানি, কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১০ জুলাই ২০২৫ ১৭:৫৪

ঢাকা: দেশে রাজস্ব ফাঁকিসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলো। বর্তমানে অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা তরুণ হওয়ায় তাদেরকে টার্গেট করে তামাক কোম্পানিগুলো ব্যবসাকে সম্প্রসারণের জন্য নানাভাবে দেশের আইন ভঙ্গ করছে।

তরুণদেরকে তামাকের ভোক্তায় পরিণত করতে সিগারেটের চটকদার বিজ্ঞাপন, ই-সিগারেটের প্রচারণা, খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে এমআরপি আইন লঙ্ঘন করছে তারা। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও দেশের তরুণদের রক্ষায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা)।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পার্যালোচনা’ বিষয়ক এক সভা শেষে তারা এ বিবৃতি দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ, খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ এবং চায়ের দোকানকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে সেখানে ধুমপান নিষিদ্ধ করা হলে নিম্ন আয়ের কোনো বিক্রেতাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কারণ দেশে মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে শুধুমাত্র তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় হয়। আর দেশের মোট বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মাত্র ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ বিক্রিয়কেন্দ্র অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করে। তামাক কোম্পানির এই ব্যবসার প্রায় পুরোটাই তরুণদেরকে টার্গেট করে পরিচালিত হচ্ছে। কারণ তরুণরা সিগারেটে অভ্যস্ত হলে তামাক কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী ভোক্তা তৈরী হবে যা তাদের মুনাফা বহুগুণে বৃদ্ধি করবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সরকার মূল্য ও কর বৃদ্ধি করলেও খুচরা শলাকা বিক্রি হওয়ায় বিশেষ করে তরুণদের মাঝে এই বৃদ্ধির কোনো প্রভাব পড়ছে না। বরং খুচরা সিগারেট বিক্রি এবং সর্বোচ্চ খুচরা শলাকার চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তামাক কোম্পানি। ফলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধের কোনো বিকল্প নেই। একইসঙ্গে এমআরপিতে সিগারেট বিক্রি নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

এছাড়া ভ্রাম্যমাণ তামাকজাত দ্রব্য বিক্রেতাদের জন্য কোনো প্রকার লাইসেন্সিং ব্যবস্থা না থাকায় সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা অনেকাংশেই বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক লাইসেন্সিং এর বিধান করা হলে তা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও মনিটরিং ব্যবস্থার সচ্ছতা নিশ্চিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা)।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সরকার ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধ করলেও তামাক কোম্পানি দেশের ভিতরে উৎপদনের পাঁয়তারা করছে। আর সেজন্য তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেটের পক্ষে জনমত তৈরিতে প্রচারণা চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ই-সিগারেটের ব্যবহার বৃদ্ধিতে তামাক কোম্পানি ব্যপকভাবে তরুণদের আকর্ষণে অর্থ বিনিয়োগ করছে। বিশ্বের প্রায় ৪০টির বেশি দেশ ইতোমধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে, ফলে বাংলাদেশকেও তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা হলে রাজস্ব আয় কমে যাওয়া, কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট হওয়াসহ এমন মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ায় তামাক কোম্পানি। অথচ ২০০৫ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস, ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করার পরও গত ১৮ বছরে তামাক থেকে রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১১ গুণ এবং তামাকের ব্যবহার কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ। ফলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও তরুণদের রক্ষায় তামাক কোম্পানি কর্তৃক আইনভঙ্গে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা না দেখিয়ে বেপরোয়া আচরণকারী বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমপি

ই-সিগারেটের প্রচারণা তামাক সিগারেট কোম্পানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর