ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠীরা এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো লোহিত সাগরে একটি কার্গো জাহাজে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় নৌ-মিশন।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির বরাতে জানা গেছে, ‘ইটারনিটি সি’ নামের লাইবেরিয়া-পতাকাবাহী ও গ্রিস-পরিচালিত এই জাহাজে থাকা ২৫ জন ক্রুর মধ্যে ১০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন এবং কয়েকজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস (ইউকেএমটিও) সংস্থা জানায়, সোমবার (৭ জুলাই) ক্ষুদ্র নৌযান থেকে রকেটচালিত গ্রেনেড ছুড়ে হামলা চালানো হয় কার্গো জাহাজটিতে। এতে জাহাজটি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। মঙ্গলবারও (৮ জুলাই) হামলা অব্যাহত ছিল এবং রাতেই উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।
হুতিরা দাবি করেছে, জাহাজটি ইসরায়েলের উদ্দেশে যাচ্ছিল বিধায় তারা হামলা চালিয়েছে এবং কিছু ক্রুকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এসব হামলা চালানোর দাবি হুতিদের।
ফিলিপাইনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাহাজের ২৫ ক্রুর মধ্যে ২১ জন ফিলিপিনো নাগরিক। অপর একজন রাশিয়ান নাগরিক গুরুতর আহত হয়ে একটি পা হারিয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রেড সাগর নৌ মিশন ‘অপারেশন অ্যাস্পাইডেস’ জানায়, বুধবার (৯ জুলাই) রাতে আরও চারজনকে উদ্ধার করা হয়েছে- তিনজন ফিলিপিনো ও একজন গ্রিক নাগরিক। এ নিয়ে মোট ১০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, বিভিন্ন মেরিটাইম নিরাপত্তা সংস্থা চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
এর মাত্র কয়েকদিন আগেই হুতিরা আরেকটি লাইবেরিয়া-পতাকাবাহী, গ্রিক-পরিচালিত জাহাজ ‘ম্যাজিক সিজ’-এ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে সেটিকে ডুবিয়ে দেয়। জাহাজটি অধিকৃত ফিলিস্তিনের বন্দরে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করেছিল বলে দাবি করে হুতিরা।
হুতিদের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, সশস্ত্র ব্যক্তিরা জাহাজটিতে ওঠে বিস্ফোরণ ঘটায়, যা ডুবিয়ে দেয় জাহাজটিকে। তবে ‘ম্যাজিক সিজ’-এর সব ২২ জন ক্রুকে পাশের একটি জাহাজ নিরাপদে উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে হুথিরা লোহিত সাগর ও গালফ অব এডেনে প্রায় ৭০টি বাণিজ্যিক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং ক্ষুদ্র নৌযান দিয়ে হামলা চালিয়েছে। তারা এখন পর্যন্ত চারটি জাহাজ ডুবিয়েছে, একটি দখল করেছে এবং অন্তত সাতজন ক্রুকে হত্যা করেছে।
গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সাময়িক অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছিল হুথিরা, যা ছিল মার্কিন পালটা হামলার জবাবে। তবে হুথিরা জানিয়েছে, এই সমঝোতা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের হামলা থামাবে না।
আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সংস্থার (আইএমও) মহাসচিব আর্সেনিও ডোমিনগেজ বলেন, ‘কয়েক মাস শান্ত থাকার পর লোহিত সাগরে নতুন করে হামলার ঘটনা আন্তর্জাতিক আইন ও নৌ চলাচলের স্বাধীনতার লঙ্ঘন। নিরপরাধ নাবিক ও স্থানীয় জনগণ এই সহিংসতা ও দূষণের প্রধান শিকার।’