Thursday 10 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শ্রুতিলেখক জটিলতা
পাস করতে পারেনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৬ পরীক্ষার্থী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ জুলাই ২০২৫ ১৯:২০

শ্রুতিলেখক না পেয়ে এসএসসি পরীক্ষার প্রথমদিন এভাবে হলে অসহায় হয়ে বসেছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছয় পরীক্ষার্থী। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: শ্রুতিলেখক নিয়ে জটিলতায় এসএসসি’র প্রথমদিন ‘সাদা খাতা’ জমা দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাত শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে একজন ছাড়া অন্য ছয় পরীক্ষার্থী শ্রুতিলেখক নিয়ে পরবর্তী সব পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু কেউই পাস করতে পারেননি। প্রথমদিনের ‘সাদা খাতা’ তাদের পিছিয়ে দিয়েছে একবছর।

শ্রুতিলেখক জটিলতা নিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ করেছিলেন অভিভাবকেরা। তারা জানিয়েছেন, শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা প্রথমদিনের পরীক্ষার বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা প্রতিশ্রুতি রাখেননি।

বিজ্ঞাপন

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ওই সাত পরীক্ষার্থী চট্টগ্রাম নগরীর হামজারবাগ এলাকার রহমানীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে যে ছয়জন সব পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তারা হলেন- হাবিবুল হক, মিনহাজ উদ্দিন, লাকী আক্তার, মো. বাদশা এবং যমজ ভাই-বোন রূপসা খানম ও মো. মারুফ।

গত ১০ এপ্রিল এসএসসি’র প্রথমদিনে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় তারা নগরীর বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া) উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসেছিলেন। কিন্তু শ্রুতিলেখক না পেয়ে কিছু লিখতে না পেরে পরীক্ষাকেন্দ্রে কিছুসময় বসে থেকে একপর্যায়ে তারা বেরিয়ে যান। পরে অভিভাবকরা তাদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে শ্রুতিলেখক দিয়ে আবারও পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, নীতিমালা অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষার্থীকে সহায়তাকারী একজন শ্রুতিলেখককে সর্বোচ্চ অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া হতে হবে এবং বয়স ১৮ বছরের নিচে হতে হবে। কিন্তু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা যাদের শ্রুতিলেখক হিসেবে ঠিক করেছিলেন, তাদের সবাই এসএসসি কিংবা এর ওপরের শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। যে কারণে পরীক্ষার আগে বিদ্যালয় থেকে তাদের এসব শ্রুতিলেখককে অনুমতি না দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে একেবারে পরীক্ষার আগে এ সিদ্ধান্ত জানানোর কারণে সেসময় নতুন শ্রুতিলেখক ঠিক করতে পারেননি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাত পরীক্ষার্থী ছিল। তারা বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় শ্রুতিলেখকের জন্য কিছুই লিখতে পারেনি। বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় শ্রুতিলেখক পেলেও কেউই এটার নম্বর দিয়ে কমপ্লিট পাস করতে পারেনি। সুতরাং তারা বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় ফেল করেছেন।’

জানা গেছে, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হাবিবুল হক বাংলা প্রথম পত্রের পাশাপাশি গণিতেও ফেল করেছেন। বাকি পাঁচজন শুধুমাত্র বাংলা প্রথমপত্রে ফেল করেছেন।

হাবিবুলের মা শারমিন আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘শ্রুতিলেখক আমরা জোগাড় করেছিলাম। কিন্তু শিক্ষাবোর্ড ও স্কুলের শিক্ষকদের গাফেলতির জন্য আমরা তাকে প্রথমদিনের পরীক্ষায় বসাতে পারিনি। শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা আমাদের বলেছিলেন, প্রতিবন্ধী বিবেচনায় তাদের প্রথম দিনের পরীক্ষার বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখবেন। আমরা আশা করেছিলাম, পুনরায় পরীক্ষা নেবে অথবা ফলাফলে সহানুভূতি পাওয়া যাবে। কিন্তু তারা আবার পরীক্ষাও নেয়নি, ফলাফলে দেখলাম, ফেল দেখানো হয়েছে।’

‘আমার ছেলেটাকে নিয়ে আমি গত ১৬ বছর ধরে যুদ্ধ করছি। আমার মতো বাকি মা-বাবাদেরও যুদ্ধও একই। শিক্ষাবোর্ডের কারণে আমাদের সন্তানগুলো একবছর পিছিয়ে গেল। তাদের মনটা ভেঙে গেল।’

এদিকে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং আদর্শ বিদ্যাপীঠের ১৩ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ নিয়ে জটিলতায় প্রথমদিনের পরীক্ষা দিতে পারেননি। তবে তারা শিক্ষাবোর্ডের বিশেষ সহানুভূতি নিয়ে দ্বিতীয়দিন বাংলা দ্বিতীয় পত্র থেকে বাকি সব পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ছয়জন পাস করেছেন।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, ‘আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে ফরম পূরণ করিয়ে তাদের বাংলা দ্বিতীয়পত্র থেকে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলাম। ইনশল্লাহ তারা সবাই দ্বিতীয় পত্রের নম্বর দিয়ে বাংলা প্রথম পত্রসহ উভয় পরীক্ষায় পাস করেছেন।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

৬ পরীক্ষার্থী এসএসসি টপ নিউজ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শ্রুতিলেখক জটিলতা