ঢাকা: বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়ে ‘দরকাষাকষির আলোচনায় যোগ্য ব্যক্তিদের রাখা’র পরামর্শ দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের এক আলোচনা সভায় অন্তবর্তী সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পণ্যের ওপরে ৩৫ শতাংশ ট্র্যারিফ আরোপ করেছে। আমাদের মূল যেটা আমরা রফতানি করি সেটা হচ্ছে, আরএমজি তৈরি পোশাক এই পোশাকশিল্পের ওপরে যদি ৩৫ শতাংশ ট্যারিফ আসে তাহলে এই পোষাক শিল্প মাটিতে শুয়ে পড়তে পারে, উঠতে পারবে না। তাতে আমাদের অর্থনীতির যে মেরুদন্ড সেই মেরুদন্ড ভেঙে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটা বড় সমস্যা। আমি মনে করব, অন্তবর্তী সরকার তারা কতটুকু এ ব্যাপারে মনোযোগ দিয়েছেন আমি জানি না। আরও অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে সবচাইতে যোগ্য ব্যক্তিদের এই সম্পর্কে বার্গেইন করা নিয়ে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করাটা প্রয়োজন ছিলো। সময় বোধহয় এখনো চলে যায়নি। এই বিষয়গুলো আলোচনা করে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি যেন বেঁচে থাকে, আমাদের মেয়েদের কর্মসংস্থান যেন নষ্ট না হয়, আমাদের অর্থনীতি যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেই বিষয়টা তারা অবশ্যই দেখবেন।’
‘সীমান্ত হত্যা ও পুশইন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা এবং পুশইন এই কথাগুলো আমরা সেইভাবে ঠিক বলছি না। পত্রিকায় ছোট ছোট করে নিউজ দিচ্ছি। আামি সকল সংবাদকর্মী, গণমাধ্যম কর্মীদেরকে অনুরোধ করব বিষয়টিকে সিরিয়াসলি দেখার জন্য। এটা কোনো হালকা বিষয় নয়। প্রতিদিন ঘটছে এসব, সীমান্তের চার দিকে ঘটছে। সুতরাং এই বিষয়টাকে আরও গুরুত্ব সহকারে জনমত সৃষ্টি করার জন্য আপনাদের নিয়ে আসা দরকার এবং এই বিষয়ে সরকারের প্রতিও আহ্বান জানাব যেন, তারা এই বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে ভারতের সঙ্গে দরকষাকষিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আবার ফেনীতে বন্যা শুরু হয়েছে। এখন বর্ষাকাল আরও বন্যা হবে। এই ব্যাপারেও অন্তর্বতী সরকার জোরালোভাবে পানি বন্টন, পানির হিস্যা ব্যাপারগুলো নিশ্চিত করবেন।’
জুলাই সনদ সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে প্রথম যখন কথা উঠলো, যখন সরকার চাইল তোমরা তোমাদের মতামত দাও আমরা তখনই দিয়ে দিয়েছি। এরপর কয়েকদিন আগে সরকারের তরফ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে আমরা গতকাল রাতে সেই মতামত দিয়ে দিয়েছি। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? যারে দেখতে নারী তার চলনবাঁকা কথাটা বলতে বাধ্য হলাম কিছু মনে করবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের ভাইদের বলব, আমরা সামান্য লেখাপড়া করেছি। আপনারা শব্দের মারপ্যাঁচ করে কোথায় কোন দিকে নিয়ে যেতে চান সেটা বুঝার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা তিনবার সরকার চালিয়েছি। তাই সরকার, দেশ, জনগণ, রাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, ভূরাজনীতি সেই সম্পর্কে ধারনা আমাদের কোনো অংশে কম নেই এবং আমরাই প্রথম নতুন বাংলাদেশ চেয়েছি, আমরাই রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তন করতে চেয়েছি, আমরাই অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন চেয়েছি।’
ফখরুল বলেন, ‘আপনারাও বলেছেন, আমরাও বলেছি, জাতীয় ঐক্য তৈরি করা দরকার। জাতীয় ঐক্য কোন জায়গায় হবে? জাতীয় ঐক্য হবে আমার গণতান্ত্রিক অধিকারকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে। আমি তোমার সঙ্গে একমত হবো না কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করবার জন্য আমি আমার প্রাণ বিসর্জন দেবো- এটাই জাতীয় ঐক্য এবং এটাই ডেমোক্রেসি, পরমত সহিষ্ণুতা। দুর্ভাগ্য আমাদের যে বাংলাদেশে আমরা সেই গণতন্ত্র কখনোই ওইভাবে চর্চা করিনি। গণতন্ত্র তো একটা কালচার, এর যদি চর্চা না করেন ওই জায়গায় পৌঁছাবেন কি করে?’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণসম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ীকমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যআবদুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, একে এম মহসিন, রাশেদুল হক এরফানুল হক নাহিদ, সাঈদ খান, দিদারুল আলম,খন্দকার আলমগীর হোসেন ও প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী বক্তব্য রাখেন।