ঢাকা: প্রতিবছর বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে মূল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, সেটি অর্জন করা তো দূরের কথা, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং প্রতিবছর মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ের হার কমছে। এ প্রেক্ষিতে ‘রাজস্ব আদায় অবস্থার অবনতি চোখে পড়ার মতো’- বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এক পর্যবেক্ষণে মন্তব্য করা হয়েছে।
রাজস্ব আদায়ের গতিধারা নিয়ে অর্থ বিভাগ এর পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘গত দশকে (২০১৪-১৫ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর) রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রকৃত রাজস্বের মধ্যে ব্যবধান আরও বেড়েছে। বিশেষ করে গত ২০২০-২১ অর্থবছরের পর থেকে অবস্থার অবনতি চোখে পড়ার মতো। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রকৃত রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২২ দশমিক ৬ শতাংশ কম ছিল, যার প্রধান কারণ হলো অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহে সক্ষমতার ঘাটতি।’
সম্প্রতি বাজেট ডকুমেন্ট হিসেবে প্রকাশিত ‘মধ্য মেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৫-২৬ থেকে ২০২৭-২৮)’-তে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।
অর্থ বিভাগ এর পর্যবেক্ষণে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়াতে পাঁচটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সীমিত কর ভিত্তি, ব্যাপক কর ফাঁকি, কর জালের বাইরে থাকা বৃহৎ অনানুষ্ঠানিক খাত, রাজস্ব সংগ্রহকারী সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও দুর্নীতি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি।
এদিকে প্রতিবছর ‘রাজস্ব আদায়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা’কে সমস্যা’ হিসেবে মনে করে একই মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ’ (আইআরডি)।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সম্পাদিত বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ)-তে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে আইআরডি। এছাড়া আরও চারটি সমস্যার কথা তুলে ধরেছে সংস্থাটি। এগুলো হচ্ছে- কর পরিসর সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে জরিপ কার্যক্রমে পদ্ধতিগত সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রিতা; আন্তঃকর ব্যবস্থাপনায় তথ্য বিনিময়ের অপ্রতুলতা এবং দক্ষ জনবলের স্বল্পতা ও ভৌত অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাদির অভাব।
আর রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর মতে, সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে- জনবল স্বল্পতা ও প্রশিক্ষিত জনবলের অপ্রতুলতা।
বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ লাখ ৯২ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা (মূল লক্ষ্যমাত্রার ৮৮.৭৫ শতাংশ এবং ঘাটতি ৩৭,১১৯ কোটি টাকা); ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা (মূল লক্ষ্যমাত্রার ৮৬.৪১ শতাংশ এবং ঘাটতি ৫০,২৬৯ কোটি টাকা) এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা (মূল লক্ষ্যমাত্রার ৮৪ শতাংশ এবং ঘাটতি ৬৮,৫৪৮ কোটি টাকা) রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল বাজেটে এনবিআর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে এনবিআর-এর সাময়িক তথ্য মতে, গত ২৯ জুন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। সম্পূর্ণ হিসাব পাওয়া গেলে এটি বেড়ে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে বলে আশা করছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। তবে এনবিআর-এ অহেতুক বিশৃঙ্খলা না হলে রাজস্ব আদায় ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াতো বলেও মনে করেন তিনি।
যা হোক, প্রত্যাশার হিসাবে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে। তবে মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা এবং রাজস্ব আদায়ের হার দাঁড়াবে ৭৭ শতাংশ।