Friday 11 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বৌদ্ধধর্ম বাংলাদেশ ও ভারতের সাংস্কৃতিক সংযোগ ঘটিয়েছে: প্রণয় ভার্মা

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট
১০ জুলাই ২০২৫ ২৩:১১

আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা

ঢাকা: বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণ ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, বৌদ্ধধর্মের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সংযোগ এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বাসাবোর ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারে ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার ও বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি সমাচার সংঘ আয়োজিত আষাঢ়ী পূর্ণিমা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘আষাঢ়ী পূর্ণিমার দিনে আমার জন্য এক বিরাট সম্মান এবং সৌভাগ্য যে আজ আপনাদের সঙ্গে আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদযাপন করতে এসেছি। এই দিনটি সারা বিশ্বে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য অন্যতম পবিত্র একটি দিন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আজকের এই পূর্ণিমার দিনে, প্রায় ২৫০০ বছর আগে, ভগবান গৌতম বুদ্ধ ভারতের সারনাথে তার প্রথম ধর্মদেশনা দিয়েছিলেন, যার মাধ্যমে ধর্মচক্র প্রথম গতি লাভ করে—ধর্মচক্র প্রবর্তন। এই দিনটি সংঘের সূচনার দিন হিসেবে চিহ্নিত, সেই মহৎ সম্প্রদায়—সন্ন্যাসী, ভিক্ষু, এবং সাধারণ অনুসারীরা যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভগবান বুদ্ধের শান্তি, করুণা ও প্রজ্ঞার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই দিনটি ভিক্ষুদের জন্য বর্ষাবাসের সূচনাও নির্দেশ করে, যা পরবর্তী তিনটি চান্দ্র মাস ধরে চলবে।’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা হিন্দু ধর্মের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘এই দিনটি গুরু পূর্ণিমা হিসেবে পালিত হয়। আমাদের আধ্যাত্মিক গুরুদের—যারা জ্ঞান, নৈতিকতা, এবং দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে আমাদের পথ আলোকিত করেন—সম্মান জানানোর একটি দিন।’

তিনি বলেন, ‘আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদযাপন আমাদের দুই জাতির ঐক্যবদ্ধ আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন। গৌতম বুদ্ধের বোধিলাভ, প্রথম ধর্মদেশনা এবং মহাপরিনির্বাণের ভূমি হিসেবে, বৌদ্ধ চিন্তার বিকাশ এবং চর্চার উত্স হিসেবে, ভারত বহু বছর ধরে বিশ্বজুড়ে বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অপরদিকে, বর্তমান বাংলাদেশের অঞ্চলটি অতীতে বৌদ্ধ শিক্ষার একটি প্রাণবন্ত কেন্দ্র ছিল। অতীশ দীপংকর-এর মতো বিশিষ্ট পণ্ডিতরা কেবল এই অঞ্চলে নয়, তার বাইরেও বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৌদ্ধ ধর্মের মাধ্যমে গড়ে ওঠা দীর্ঘকালীন সম্পর্ক ভারত ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সংযোগ এবং জনগণের মধ্যকার সম্পর্কের একটি সমৃদ্ধ অংশ হিসেবে বর্তমান সময়েও বিদ্যমান, যা তীর্থযাত্রা, একাডেমিক বিনিময়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আজকের মতো উৎসবের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবী সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত; পরিবেশগত অবক্ষয় এবং সামাজিক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তবে, এর মাঝেও ভগবান বুদ্ধের আত্ম-অন্বেষণ, সংযম এবং করুণার বার্তা আমাদের সহানুভূতির শক্তি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল্য মনে করিয়ে দেয়। তার প্রজ্ঞা, অন্তর্মুখী শান্তি এবং অহিংসার প্রতীক আমাদের ভবিষ্যতের পথ আলোকিত করে। ভারত ভগবান বুদ্ধের শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার এবং বৌদ্ধ ঐতিহ্যকে সমর্থন করার জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সংমিশ্রণ, বৌদ্ধ প্রত্নবস্তুর সংরক্ষণ, মঠ ভিত্তিক শিক্ষার সহায়তা এবং সাংস্কৃতিক বোঝাপড়াকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ তার প্রমাণ।’

ভারতের ‘বৌদ্ধ সার্কিট’ উদ্যোগ এই প্রচেষ্টার একটি অংশ—যার মাধ্যমে লুম্বিনি থেকে বোধগয়া, সারনাথ থেকে কুশীনগর পর্যন্ত পবিত্র বৌদ্ধ স্থলগুলোকে একত্রে সংযুক্ত করা হয়েছে, যাতে ভগবান বুদ্ধের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারেন তীর্থযাত্রীরা। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন— মিসেস মনু ভার্মা এবং ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের অ্যান মেরি জর্জ ও জিতেন্দ্র বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে গৌতম বুদ্ধ এর জীবনী নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র ও গীতিনাটক প্রদর্শনী পরিবেশন করা হয়েছে।

সারাবাংলা/একে/এইচআই

আষাঢ়ী পূর্ণিমা প্রণয় ভার্মা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর