লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের সংস্কৃতিচর্চায় বিশেষ অবদান রাখায় পাঁচজন গুণী সংস্কৃতিকর্মীকে ‘গুণীশিল্পী সম্মাননা-২০২৪’ প্রদান করা হয়েছে
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।”
এবার গুণীশিল্পী হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন নাট্যকর্মী মো. সামসুদ্দোহা বাবু, লোকসংস্কৃতি গবেষক ও শিল্পী শরণ কুমার বর্মা, তবলা ও তালবাদ্যশিল্পী মুকুল চন্দ্র রায়, কণ্ঠসংগীতশিল্পী শাওন রায় ও সাংগঠনিক সাংস্কৃতিক কর্মী সত্যেন্দ্রনাথ রায়।
নাট্যকলায় সম্মাননা পাওয়া মো. সামসুদ্দোহা বাবু দীর্ঘ দুই দশক ধরে নাটক নির্দেশনা ও অভিনয়ে যুক্ত থেকে স্থানীয় নাট্যচর্চায় অবদান রেখে চলেছেন। বিভিন্ন নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত থেকে মঞ্চনাটককে ছড়িয়ে দিয়েছেন শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত।
লোকসংস্কৃতি বিভাগে সম্মানিত হয়েছেন শরণ কুমার বর্মা, যিনি পল্লীগীতি, লোকগাথা ও লোকজ ঐতিহ্য তুলে ধরায় বিশেষ অবদান রাখছেন। তিনি নিজেও একজন অভিজ্ঞ লোকসংগীতশিল্পী।
তালযন্ত্রে অবদানের জন্য সম্মাননা পেয়েছেন মুকুল চন্দ্র রায়। বহু বছর ধরে তিনি সংগীত পরিবেশনায় তবলায় ছায়াসঙ্গী হিসেবে কাজ করে আসছেন, জেলার বহু অনুষ্ঠানে তার বাজনা শ্রোতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
কণ্ঠসংগীতে সম্মাননা পেয়েছেন শাওন রায়। আধুনিক গান, দেশাত্মবোধক সংগীত ও নজরুলগীতে তার কণ্ঠ পরিচিত এবং প্রশংসিত। সংগীতশিল্পী হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় তিনি।
সৃজনশীল সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিশেষ অবদান রাখায় সম্মাননা পেয়েছেন সত্যেন্দ্রনাথ রায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলা, অনুষ্ঠান আয়োজন এবং নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন।
এছাড়া, জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতা ‘শাপলা কুঁড়ি-২০২৫’-এ জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় লালমনিরহাটের এক কিশোর প্রতিযোগীকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করে জেলা শিল্পকলা একাডেমি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মো. হাসানুর রশীদ। পরে অতিথিরা গুণীজনদের হাতে সম্মাননা স্মারক, উত্তরীয় ও সনদপত্র তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান একেএম মমিনুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, সংস্কৃতি সমাজের আয়না। গুণীজনদের সম্মাননা শুধু তাদের নয়, বরং পুরো জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি। নতুন প্রজন্ম এই সম্মাননার মাধ্যমে উৎসাহিত হবে বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।
সম্মাননা পাওয়া শিল্পীরাও তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, অনেক সময় অবদানের পরও রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক গুণী মানুষ অবহেলিত হন। তবে এবারের আয়োজনটি ছিল স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং যথার্থ সম্মানপ্রদান। এ ধরনের উদ্যোগ সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে বলেও আশাবাদ জানান তাঁরা।
অনুষ্ঠান শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে যা রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত চলে।