ভিডিও-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক থেকে নিজের অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে অস্বীকার করায় পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে এক বাবা তার ১৬ বছর বয়সী মেয়েকে গুলি করে হত্যা করেছেন। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, মেয়েটি টিকটক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করতে রাজি না হওয়ায় তার বাবা তাকে হত্যা করেন।
শুক্রবার (১১ জুলাই) ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ অভিযুক্ত বাবাকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পর পরিবার প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।
টিকটক পাকিস্তানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে; বিশেষত দেশের নিম্ন সাক্ষরতার হারের কারণে। এই প্ল্যাটফর্মটি অনেক নারীর জন্য দর্শক এবং আয়ের উৎস তৈরি করেছে, যা এমন একটি দেশে বিরল যেখানে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত।
তবে, মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৫ অনুযায়ী, পাকিস্তানে মাত্র ৩০ শতাংশ নারীর স্মার্টফোন রয়েছে, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৫৮ শতাংশ। এটি বিশ্বের বৃহত্তম লিঙ্গভিত্তিক ডিজিটাল ব্যবধানগুলোর একটি।
টিকটকের জনপ্রিয়তা বাড়ার পাশাপাশি এটি বিতর্কিতও হয়েছে। পাকিস্তানি টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ অ্যাপটিকে ‘অনৈতিক আচরণ’ (বিশেষ করে এলজিবিটিকিউ এবং যৌন বিষয়বস্তু) এর অভিযোগে বারবার বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে বা কার্যকরভাবে ব্লক করেছে।
সামাজিক মাধ্যমে নারীদের উপস্থিতি প্রায়শই রক্ষণশীল সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। গত মাসে, সানা ইউসুফ নামে ১৭ বছর বয়সী এক জনপ্রিয় টিকটক ইনফ্লুয়েন্সারকে তার বাড়িতে হত্যা করা হয়েছিল, কারণ তিনি এক ব্যক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তার লক্ষাধিক ফলোয়ার ছিল।
এ ছাড়াও, বেলুচিস্তানের মতো কিছু এলাকায়, যেখানে উপজাতীয় আইন প্রচলিত, সেখানে এই বছরের শুরুতে এক ব্যক্তি তার ১৪ বছর বয়সী মেয়েকে টিকটক ভিডিওর কারণে ‘সম্মান ক্ষুণ্ণ’ হয়েছে দাবি করে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
এই ঘটনাগুলো পাকিস্তানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী নারীদের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার ঝুঁকির বিষয়টি আবারও সামনে এনেছে।